Chapter-1 বৈষ্ণবী মায়া
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) ‘চৈতন্য ভাগবত’ গ্রন্থটি কে রচনা করেছেন?
উত্তরঃ ‘চৈতন্য ভাগবত’ গ্রন্থটি বৃন্দাবন দাস রচনা করেছেন।
(খ) ‘বৈষ্ণবী মায়া’ কবিতাটিতে কাব্যাংশটিতে কার
বাল্যলীলা বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তরঃ ‘বৈষ্ণবী মায়া’ কবিতাটিতে কাব্যাংশটিতে
শ্রীচৈতন্যের বাল্যলীলা বর্ণনা করা হয়েছে।
(গ) বৃন্দাবন দাসের মায়ের নাম কী?
উত্তরঃ বৃন্দাবন দাসের মায়ের নাম নারায়ণী দেবী।
(ঘ) ‘প্রভুর শ্রীঅঙ্গে দেখে দিব্য অলঙ্কার’ – এখানে প্রভু বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে প্রভু বলতে শ্রীচৈতন্যকে বোঝানো হয়েছে।
(ঙ) মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের বাল্য নাম
কী?
উত্তরঃ মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের বাল্যনাম নিমাই।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) চৈতন্যদেবের পিতা-মাতার নাম
উল্লেখ করো।
উত্তরঃ চৈতন্যদেবের পিতার নাম জগন্নাথ মিশ্র । চৈতন্যদেবের মাতার নাম
শচীদেবী।
(খ) দুই চোর শিশু নিমাইকে কেন হরণ
করেছিলেন? তাদের অভিপ্রায় কি পূর্ণ হয়েছিল?
উত্তরঃ শৈশবে শিশু নিমাইয়ের অঙ্গে নানা অলঙ্কার ছিল। আর সেগুলি চুরি
করবার জন্য দুজন চোর মতলব আঁটল। দুইজন চোর ভেবেছিল নিমাইয়ের শরীরে যেসব অলঙ্কার
আছে তা তারা দুজনে ভাগ করে নেবে। তাদের অভিপ্রায় ব্যর্থ হয়েছিল।
(গ) নিমাইকে হরণ করবার পর নবদ্বীপ
বাসীর মনের অবস্থা কী হয়েছিল?
উত্তরঃ দুই চোর নিমাইকে হরণ করার পর, নিমাইকে দেখতে না পেয়ে অসংখ্য
লোকের মধ্যে সোরগোল পড়ে গেল। কেউ বিশ্বন্তরকে ডাকল, কেউ আবার চিৎকার করে নিমাইয়ের নাম
ধরে ডাকল। জল ছাড়া যেমন মৎসের জীবন বিপন্ন হয় ঠিক তেমনি নিমাইকে ছাড়া গ্রামবাসীর অবস্থাও
তেমনি হয়। তাই সবাই শেষে কৃষ্ণনাম শুরু করে দিলেন।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো :
“জল বিনা যেন হয় মৎস্যের জীবন”
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি বৃন্দাবন দাস রচিত ‘বৈষ্ণবী মায়া’ কবিতাংশটি থেকে নেওয়া হয়েছে।
শৈশবে নিমাইয়ের অঙ্গে নানা অলঙ্কার ছিল সেই অলঙ্কার দেখে সেগুলি
চুরি করার জন্য দুজন চোর মতলব আঁটে। তারপর নিমাইকে কোলে করে নিয়ে তারা পালায়।
দুই চোর ভেবেছিল যে যেসব মহামূল্য অলঙ্কার নিমাইয়ের অঙ্গে আছে তা তারা দুজনে ভাগ
করে নেবে। এমনকী নিমাই যাতে গোলমাল না করে সেজন্য তাকে চোরেরা সন্দেশও দিল। আর
অন্যদিকে নিমাইকে না দেখে নবদ্বীপবাসীর চারদিকে সোরগোল পড়ে গেল। কেউ বিশ্বম্ভরকে
ডাকল, কেউ নিমাইকে চিৎকার করে ডাকল। জল ছাড়া যেমন মাছ ছটফট করতে থাকে, নিমাইকে ছাড়াও গ্রামবাসীদের মানসিক অবস্থা তদদ্রুপ হয়েছে। নিমাই হল
জনসাধারণের চোখের মণি। তাই গ্রামবাসীরা সকলেই কৃষ্ণনাম শুরু করে দিল। নিমাই
জনসাধারনের প্রাণস্বরূপ।
(খ) কাব্যাংশটির নামকরণের সার্থকতা
বিচার করো।
উত্তরঃ যে কোনো গ্রন্থের নামকরণ হয় ঘটনার নামে, না হয় চরিত্রের নামে অথবা কবির অভিপ্রায় অনুসারে। বৃন্দাবন দাস
বিরচিত ‘চৈতন্য ভাগবতের’ আদি খণ্ডের চতুর্থ অধ্যায়েব এই পদটিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের উদগাতা, প্রাণ পুরুষ শ্রীচৈতন্যদেবের বাল্যলীলার একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
একদিন স্বর্ণালংকারের লোভে দুজন চোর শিশু নিমাইকে চুরি করে নিয়ে
পালায়। শৈশবে শিশু নিমাইয়ের অঙ্গে প্রচুর অলঙ্কার ছিল। তাই দুই চোর ভেবেছে
নিমাইকে চুরি করে নিয়ে গিয়ে দুজনে অলঙ্কারগুলো ভাগ করে নিবে। তাই চোর দুইজন
নিমাইকে কোলে করে নিয়ে যায় ৷ এমন কী নিমাই যাতে কোনো গণ্ডগোল না করে তার জন্য
নিমাইকে সন্দেশও খেতে দেয়। কিন্তু ভগবানকে তো চুরি করা সহজ কথা নয়। তাই ভগবানের
মায়ায় ভুলে নানা স্থানে ঘুরে শেষে তারা নিমাইয়ের পিতা জগন্নাথ মিশ্রের বাড়িতে
এসেই হাজির হয়। নিমাইও চোরের কোল থেকে নেমে হাসতে হাসতে বাবার কোলে গিয়ে উঠেন।
এখানে এই ঘটনার মধ্যে আসলে চৈতন্যদেবের অবতারের রূপটিকেই দেখানো হয়েছে। তাই
বৈষ্ণবী মায়ায় দুই চোর তাদের চৌর্য বৃত্তিতে অজান্তেই ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু
নিমাইকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে তাদের পাপ খণ্ডন হয়েছে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
(ক) বাংলা ভাষায় প্রথম জীবনী
-সাহ্যিতের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ বাংলা ভাষায় প্রথম জীবনী সাহিত্যের রচয়িতা বৃন্দাবন দাস।
(খ) বৃন্দাবন দাসের জন্ম কবে হয়েছিল?
উত্তরঃ আনুমানিক ১৫০৫ থেকে ১৫১৮ অব্দের মধ্যে।
(গ) বৃন্দাবন দাসের শৈশব কোন গ্রামে অতিবাহিত হয়?
উত্তরঃ বৃন্দাবন দাসের শৈশব নবদ্বীপের অদূরে অবস্থিত মামগাছি গ্রামে
অতিবাহিত হয়।
(ঘ) নিজের লেখায় বৃন্দাবন দাস
অনেকবার কোন বিষয় জানিয়েছিলেন?
উত্তরঃ নিজের লেখায় বৃন্দাবন দাস অনেকবার জানিয়েছেন যে তিনি
নিত্যানন্দের সর্বশেষ শিষ্য।
(ঙ) বৃন্দাবন দাস কত বছর বয়সে ‘চৈতন্য ভাগবত’ গ্রন্থটি লেখা শুরু করেন?
উত্তরঃ ছন্দাবন দাস আনুমানিক ২২-২৩ বছর বয়সে ‘চৈতন্য ভাগবত’ গ্রন্থটি লেখা শুরু করেন।
(চ) ‘চৈতন্য ভাগবত’ গ্রন্থটিতে কয়টি খণ্ড আছে?
উত্তরঃ ‘চৈতন্য ভাগবত’ গ্রন্থটি মোট তিনটি খণ্ড আছে।
(ছ) চৈতন্য ভাগবত গ্রন্থে খণ্ডগুলিতে
কতগুলি অধ্যায় আছে?
উত্তরঃ চৈতন্য ভাগবত গ্রন্থে আদি খণ্ডে ১৫টি অধ্যায়, মধ্যখণ্ডে ২৬ টি অধ্যায় এবং অন্ত্যখণ্ডে ১০ টি অধ্যায় আছে।
(জ) বৃন্দাবন দাসের মৃত্যু কবে
হয়েছিল?
উত্তরঃ আনুমানিক ১৫৮৯ অব্দে বৃন্দাবন দাসের মৃত্যু হয়েছিল।
২। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
(ক) ‘আস্তে ব্যস্তে দুই চোর কোলে করি ধায়।”
এখানে দুই চোর কাকে কোলে নিয়েছে এবং আস্তে ব্যস্তে বলতে কি
বুঝিয়েছে?
উত্তরঃ এখানে দুই চোর নিমাইকে কোলে নিয়েছে। আস্তে ব্যস্তে বলতে
ব্যগ্রভাবে বোঝানো হয়েছে।
(খ) নিমাইয়ের গায়ের অলঙ্কার দেখে
দুই চোর কি ভেবেছিল?
উত্তরঃ দুই চোর নিমাইয়ের শরীরের অলঙ্কার দেখে মহাতুষ্ট হয়েছিল। দুই
চোরই ভেবেছিল নিমাইয়ের বাহুর অলঙ্কার নিবে। এই ভেবে দুই চোর মনে মনে চিন্তা
করেছিলেন।
(গ) বৈষ্ণবী মায়ায় দুই চোরের কী
অবস্থা হয়েছিল?
উত্তরঃ দুই চোর নিমাইকে চুরি করে নিয়ে গিয়ে বৈষ্ণবী মায়ায় জগন্নাথের
ঘরে চলে এল। চোর জানে এটা তাদেরই ঘর। কাঁধ থেকে নিমাইকে নামিয়ে তারা অলঙ্কার
হরণের কথা ভাবলো। কিন্তু নেমেই নিমাই বাপের কোলে উঠে পড়লেন। চোর দুজন ভাবল এ এক
অসাধারণ ভেল্কি। তারা সুস্থ হয়ে দুজনে দুজনকে কোলাকুলি করে কোথায় যে চলে গেল কেউ
জানতে পারল না। এই দুই চোর মহাভাগ্যবান। কেননা তারা ঈশ্বরকে স্কন্ধে নিয়েছিল।
শব্দার্থ :
আথেবাথে – ব্যগ্রভাবে।
অর্বুদ অর্বুদ – দশ কোটি, এখানে অসংখ্য অগণন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
তাড়বালা – বাহুর অলংকার।
ভাণ্ডিয়া – প্রতারণা করে।
মর্মস্থানে – ঘাঁটিতে।
আপ্তগণ – ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
স্কন্ধের – কাঁধের।
মৎস্যের – মাছের।
হরিতে – হরণ করা।
সত্বর – শীঘ্র।