Chapter-2 কালকেতুর ভোজন
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) ‘কালকেতুর ভোজন’ পাঠটি কোন কাব্যের অন্তর্গত?
উত্তরঃ ‘কালকেতুর ভোজন’ পাঠটি মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের আখেটিক বা বাধ্যখণ্ড থেকে অন্তর্গত।
(খ) ‘কালকেতুর’ ভোজন পাঠটির কবি কে?
উত্তরঃ কালকেতুর ভোজন পাঠটির কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী।
(গ) ‘মোচড়িয়া গোঁফ দুটা বান্ধিলেন ঘাড়ে’— এখানে কে গোঁফ দুটো ঘাড়ে বেধেঁছিল?
উত্তরঃ এখানে বীর কালকেতু গোঁফ দুটো ঘাড়ে বেধেঁছিল।
(ঘ) এক শ্বাসে কালকেতু কয় হাঁড়ি ‘আমানি’ শেষ করে?
উত্তরঃ এক শ্বাসে কালকেতু সাত হাঁড়ি আমানি শেষ করে।
(ঙ) ফুল্লরা কে?
উত্তরঃ ফুল্লরা কালকেতুর স্ত্রী।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) দূর হতে ফুল্লরা বীরের পাল্য
সাড়া’ – এখানে বীর বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? বংবীরের সাড়া পেয়ে ফুল্লরা কী করেছিল?
উত্তরঃ এখানে বীর বলতে কালকেতুকে বোঝানো হয়েছে।
ফুল্লরা বীরের সাড়া পেয়ে তাকে সম্ভ্রমে হরিণের ছালে বসতে দিল।
তারপর সে কালকেতুর ভোজনের ব্যবস্থা করে। নারকেলের মালায় ভর্তি করে জল দিল।
(খ) ‘এন্যাছি হরিণী দিয়া দধি এক হাঁড়ি’— কে হরিণী দিয়ে দধি এনেছে? আর সেই দধির ব্যবহার কীভাবে হয়েছিল?
উত্তরঃ ফুল্লরা হরিণী দিয়ে দধি এনেছে।
আর সেই দধি দিয়ে তিন হাড়ি অন্ন খেয়েছিল কালকেতু।
(গ) ‘তেয়াটিয়া তাল’ বলতে কী বোঝ? তেয়াটিয়া তালের সঙ্গে কালকেতুর কী সম্পর্ক?
উত্তরঃ ‘তেয়াটিয়া তাল’ বলতে তিন আঁটিযুক্ত বড় তালকে
বোঝানো হয়েছে। কালকেতু ভোজনের সময় মুখে যে গ্রাস তোলে তা তেয়াটিয়া তালের সমান।
(ঘ) ‘রন্ধন কর্যাছ ভাল আর কিছু আছে’ – এখানে কার রান্নার কথা বলা হয়েছে? সে কালকেতুর জন্য কী কী ব্যঞ্জন তৈরি করেছিল?
উত্তরঃ এখানে ফুল্লরার রান্নার কথা বলা হয়েছে।
ফুল্লরা কালকেতুর জন্য পান্তাভাত, আমানী, খুদের চাউ, মুসুরীর সুপ, বনজাত ওল কচু আলু আমড়া করমচা আর
হরিণের বদলে দই ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যঞ্জন কালকেতুর ভোজনের জন্য তৈরি করেছিল।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) কালকেতুর ভোজন’ অবলম্বনে কালকেতুর ভোজনের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ চণ্ডীমণ্ডল কাব্যের বিশিষ্ট কবি হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।
তিনি মধ্যযুগের বিশিষ্ট মঙ্গল কাব্য রীতির সৃষ্টি করেছেন। তাঁর চণ্ডীমঙ্গল কাব্য
মধ্য যুগের সাহিত্য ধারার নতুনত্বের পরিচয়বহ। তাঁর জীবন দর্শন ও বাস্তব অভিজ্ঞতা
তাঁকে অন্যান্য পদকর্তাদের থেকে পৃথক করেছে। কবিকঙ্কণের বাস্তব চিত্রাঙ্কন ক্ষমতা, সমাজ সচেতনতা ও মনস্তত্ব জ্ঞানের উৎকৃষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়
চণ্ডীমঙ্গলের বিভিন্ন উপকাহিনি ও ঘটনা পরম্পরায়। আর মুকুন্দরামের প্রকৃত বাস্তব
চেতনার পরিচয় পাই নরখণ্ডের অংশ বিশেষ।
ব্যাধনন্দন কালকেতুর শরীরের আকৃতি ছিল বন্য প্রকৃতি, শক্তি সাহসিকতা, ভোজন-শয়ন ইত্যাদি বর্ণনায়
মুকুন্দরাম তার আদিম ব্যাধ চরিত্রটিকে নিখুঁতভাবে এঁকেছেন।
কালকেতুর ভোজন পর্বেও এই নিখুঁত বর্ণনাই দেখতে পাওয়া যায়। কালকেতুর
জন্য তার স্ত্রী ভোজনের ব্যবস্থা করে। কালকেতু খাওয়ার আগে তার গোঁফ ঘাড়ে বেঁধে
নেয়। এক নিঃশ্বাসে সাত হাঁড়ি আমানি, চার হাঁড়ি খুদ জাউ, ছয় হাঁড়ি লাউ সহ মুসুরী সুপ ইত্যাদি ভক্ষণ করে। আবার এছাড়াও দুই
তিন মুড়ি আলু ও ওল পোড়া আর কচুর সঙ্গে করমচাও খেয়েছে। এত কিছু খেয়েও আবার আরো
কিছু আছে কিনা জানতে ফুল্লরাকে জিজ্ঞেস করে আর ফুল্লরা তখন এক হাঁড়ি দধি দেয়। আর
সেই দধি দিয়ে তিনহাড়ি ভাত খায় কালকেতু। খাওয়ার সময় কালকেতুর মুখের গ্রাস হয়
তেয়াটিয়া তালের মতো। এরপর ভোজন শেষ করে হরীতকী দিয়ে মুখ শোধন করে।
(খ) ‘কালকেতুর ভোজন’ অবলম্বনে কৌতুকরস সৃষ্টিতে কবি
মুকুন্দরামের দক্ষতা আলোচনা করো।
উত্তরঃ হাসি মানব জীবনের এক দুর্লভ সম্পদ। যে মানুষ প্রায় খুলে
হাসতে পারে না তাকে সুস্থ পদবাচ্যে ভূষিত করা যায় না। কবি মুকুন্দরাম ‘কালকেতুর ভোজন’ অংশে যে হাস্যরস ফুটিয়ে তুলেছেন তা অতুলনীয়। কালকেতুর ভোজন দৃশ্য
সাধারণ সামাজিক মানুষের থেকে পৃথক। এতে ব্যাধ জীবনের ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘মোচরিয়া গোঁফ
দুটা বান্ধিলেন ঘাড়ে / এক শ্বাসে সাত হাঁড়ি আমানি উজারে।’ কালকেতুর এই খাওয়ার ব্যঞ্জনা পাঠকগণকে হাসতে বাধ্য করেছে। কবি
মুকুন্দও কালকেতু ভোজন দৃশ্য প্রসঙ্গে আরও জানিয়েছেন –
শয়ন কুৎসিত বীরের ভোজন বিকাল
ছোট গ্রাস তোলে যেন তেয়াটিয়া তাল
কালকেতু যে বীর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বনের ভয়ঙ্কর ও শক্তিমান
পশুরাও বীর কালকেতুকে ভয় পায়। আর সেই কালকেতুর ভোজন ও যে বড় মাপের আয়োজনে হয়ে
থাকে এটাই স্বাভাবিক। কবি মুকুন্দ তাই এভাবেই ভোজন দৃশ্যটি বর্ণনা করে জানিয়ে দিয়েছেন।
বীর কালকেতু শিকার করে বন থেকে গৃহে ফিরলেই স্ত্রী ফুল্লরা কালকেতুর ভোজনের
ব্যবস্থা করে। হরিণের ছাল পেতে বসতে দেয় এবং নারকেলের মালায় দেয় জল। আর
পরিশ্রান্ত কালকেতু মুখে জল দিয়ে “ভোজন করিতে ঠেসে মনের কৌতুকে।” কিভাবে কতটা পরিমাণ খাদ্য ভক্ষণ করে কালকেতু তার বর্ণনাও কবি
দিয়েছেন। গোঁফ মুচরিয়ে বেধে, সাত হাড়ি আমানি খেয়েই খাওয়া শেষ
হয় না কালকেতুর, সে এরপরেও ফুল্লরাকে বলে ‘বন্ধন করছে ভাল আর কিছু আছে” এরপর কালকেতু এক হাঁড়ি দধি দিয়ে তিন হাড়ি অন্ন খায়। এত কিছুর পরে
আর কি খাওয়ার থাকতে পারে। কালকেতুর ভোজন দেখে আমরা না হেসে পারি না। আসলে বার
কালকেতুর ভোজন দৃশ্য বর্ণনার মধ্যে দিয়ে কবি যেমন একদিকে হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন
অন্যদিকে তেমনি তৎকালীন ব্যাধ জীবনের চিত্রকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন আপন প্রতিভার
গুণে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তরঃ
(ক) মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল
গ্রন্থটির প্রকৃত নাম কি?
উত্তরঃ মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল গ্রন্থটির প্রকৃত নাম ‘অভয়ামঙ্গল’।
(খ) মুকুন্দরামের জন্মস্থান কোথায়?
উত্তরঃ মুকুন্দরামের জন্মস্থান বর্ধমান জেলার রত্না নদীর তীরে
দামুণ্যা গ্রামে।
(গ) মুকুন্দের কাব্যের প্রথম খণ্ডের
নাম কি?
উত্তরঃ মুকুন্দের কাব্যের প্রথম খণ্ডের নাম ‘আখেটিক খণ্ড’।
(ঘ) ফুল্লরা কালকেতুকে কোন পাত্রে জল
খেতে দিয়েছিল?
উত্তরঃ ফুল্লরা কালকেতুকে নারিকেলের মালায় জল খেতে দিয়েছিল।
(ঙ) কোন পাত্রে ফুল্লরা কালকেতুকে
ব্যঞ্জন পরিবেশন করেছিল?
উত্তরঃ নতুন খাপরাতে ফুল্লরা কালকেতুকে ব্যঞ্জন পরিবেশন করেছিল।
(চ) কালকেতুর শয়ন কেমন?
উত্তরঃ কালকেতুর শয়ন কুৎসিত।
(ছ) ভোজন শেষে কী খেয়ে কালকেতু মুখ
শোধন করে?
উত্তরঃ ভোজন শেষে কালকেতু হরীতকী খেয়ে মুখ শোধন করে।
(জ) পশুগণ কার চরণে নিবেদন করেছিল?
উত্তরঃ পশুগণ রাজার চরণে নিবেদন করেছিল।
(ঝ) কালকেতু কত হাড়ি খুদ-জাউ খেতে
পারে?
উত্তরঃ চার হাড়ি।
শব্দার্থঃ
ছড়া – ছাল।
পাখালি – প্রক্ষালন করে, ধুয়ে।
পাথরা – পাথরের থালা, এখানে যে কোনো বস্তু দ্বারা নির্মিত
থালা।
খাপরা – কাঠ।
উজারে – শেষ করে।