Chapter- 13 প্রাচীন কামরূপের শাসননীতি
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
(ক) প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর আগে
ভারতের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে কোন জাতি অসমে প্রবেশ করে?
উত্তরঃ প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর আগে ভারতের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে
অষ্ট্রিক জাতি অসমে প্রবেশ করে।
(খ) ‘মিথিলা দেশের এক রাজার গৃহে অসুর বংশীয়, পিতৃমাতৃহীন এক অনাথ শিশু রাজার অনুগ্রহে রাজপুত্রদের সহিত লালিত
পালিত হইয়াছিল।’— এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে রাজা নরকাসুর এর কথা বলা হয়েছে।
(গ) রাজা পুষ্যবর্মা নিজেকে কোন
বংশীয় বলে পরিচয় দিতেন?
উত্তরঃ রাজা পুষ্যবর্মা নিজেকে নরক বংশীয় বলে পরিচয় দিতেন।
(ঘ) নিধনপুর তাম্রলিপির সেক্যকার কে?
উত্তরঃ নিধনপুর তাম্রলিপির সেক্যকার কলিয়া।
(ঙ) কোন মন্দিরের দরজার চৌকাঠে খোদিত
লিপিতে হর্ষবর্মার বিজয় কাহিনি উল্লিখিত আছে?
উত্তরঃ নেপালের পশুপতি নাথের মন্দিরের দরজার চৌকাঠে ৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে
খোদিত লিপিতে হর্ষ বর্মার বিজয় কাহিনি উল্লিখিত আছে।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকের
প্রথমভাগে ভাস্কর বর্মার কামরূপের সীমা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল?
উত্তরঃ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথমভাগে ভাস্কর বর্মার কামরূপের
সীমা তখন অন্ততঃপক্ষে বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যন্ত কামরূপের পশ্চিম সীমা
বিস্তৃত হয়েছিল এবং দক্ষিণদিকে তাম্রলিপি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
(খ) কামরূপের শাসনকর্তারা কাদের এবং
কেন তাম্রপত্র দিতেন?
উত্তরঃ কামরূপের শাসনকর্তারা ব্রাহ্মণদের তাম্রপত্র দান দিতেন।
এই তাম্রপত্র দেওয়া হত সাধারণতঃ অধ্যয়নান্তে কোন বিদ্যায় বিশেষ
ব্যুৎপত্তি লাভ হলে বা
পাণ্ডিত্য বিষয়ে বুৎপত্তির পরিচয় দিতে পারলে রাজারা ভূমিদান করতেন। আর তাম্রপত্রের
প্রত্যেকটিতেই পাওয়া গেছে ভূমির দানগ্রহীতা ব্রাহ্মণ। রাজা মাতা পিতার ও নিজের যশ ও পুণ্যের
নিমিত্তেত উপযুক্ত ব্রাহ্মণকে ভূমিদান করতেন। আর যারা ভূমিদান গ্রহণ করতেন তারা
সেই ভূমি নিষ্করভাবে ভোগ করতেন।
(গ) মহাসন্ধি বিগ্রহিক কে?
উত্তরঃ মহাসন্ধি বিগ্রহিক ছিলেন যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ক ব্যাপারের
অধিপতি। শান্তির সময় তিনি রাজকীয় ভূমিদানের দানপত্রের লেখা ও খোদাই করা নিজে
তত্ত্বাবধান করতেন। রাজার আজ্ঞা মতে তাম্রপাত্রে শুদ্ধভাবে দানপত্র লিখতে হলে তিনি
তা মহামাত্যের নিকট প্রেরণ করতেন।
(ঘ) প্রাচীন কামরূপের কোন কোন বংশের
রাজারা নিজেদের নরক বংশীয় বলে পরিচয় দিতেন?
উত্তরঃ প্রাচীন কামরূপ রাজ্যে পুষ্যবর্মা নামক রাজা নিজেকে নরক
বংশীয় বলে পরিচয় দিতেন, আবার প্রাচীন কামরূপের শালস্তম্ভ
বংশের রাজারাও নিজেকে নরকের বংশ বলে পরিচয় দিতেন।
(ঙ) অস্ট্রিক জাতির যে কোনো দুটি
চরিত্র লক্ষণের উল্লেখ কর।
উত্তরঃ অষ্ট্রিক জাতি সরল, নিরীহ, শান্তিপ্রিয়, ভাবুক, কল্পনাশীল, প্রফুল্লচিত্ত, কবিত্ব গুণযুক্ত। দায়িত্বহীন এরা
অন্যের নিকট লাঘব স্বীকার করতে নারাজ।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) অষ্ট্রিক জাতি কীভাবে কামরূপে
প্রবেশ করে? প্রাচীন কালে এখানে তাদের উপস্থিতির কী প্রমাণ পাওয়া যায়?
উত্তরঃ নৃতত্ত্ববিদগণের গবেষণা মতে পাওয়া যায় যে, যে প্রায় পাঁচ ছয় হাজার বৎসর খ্রিষ্ট পূর্বে যে সময় ভারতবর্ষের আদি মানব পশ্চিমপ্রাপ্ত দিয়ে
ভারতে প্রবেশ করে শিকারলব্ধ
মাংস ও বন্য ফলমূল এবং মৎস্য আহার গ্রহণ করে দিন কাটাত প্রায় সেই সময় ভারতের পূর্বপ্রান্ত
হতে অষ্ট্রিক জাতি বর্তমান আসামের উপত্যকা ভূমি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।
প্রাচীনকালে এখানে তাদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায় এদের এক শাখা
জাতির মধ্যে। জান্মেণ পণ্ডিত স্মিটের মতে এই অস্ট্রিক জাতীয় মানুষ বর্তমান
ইন্দোচীনের উত্তর অঞ্চল থেকে এসে প্রাচীন কামরূপে প্রবেশ করেছিল, আর এদেরই এক শাখা দক্ষিণ কর্ম ও শ্যামের মোন বা তালৈং জাতি এবং
কাম্বোজের খমের জাতি, আসামে খাসিয়ারা সেই জাতির খাঁটি নিদর্শন।
(খ) কামরূপে কীভাবে নরকের আধিপত্য
একাধিপত্য স্থাপিত হল, তা লেখো?
উত্তরঃ পরবর্তীকালে ভারতের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে দ্রাবিঢ়, আর্য অসুর, অল্পাইন প্রভৃতি জাতি ভারতবর্ষে প্রবেশ করে অষ্ট্রিক সভ্যতার সঙ্গে
সংমিশ্রিত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এ কথা আজও স্বীকার করতে হয় যে ভারতের পূর্ব প্রান্তে ভারতের
আদি সভ্যতার বীজ উপ্ত হয়েছিল এবং প্রাগজ্যোতিপুরের সেই আদি সভ্যতা পশ্চাদাগত
সভ্যতার মধ্যে বিলীন হয়ে গিয়েও আপন বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে আছে।
বৈদিক আর্যরা সদানীরা পার হয়ে পূর্বদিকে অগ্রসর হননি, কিন্তু মাথব রাজা অগ্নিমুখে করে পূর্বদিকে এগিয়ে মিথিলা রাজ্যের
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মিথিলা দেশের এক রাজার গৃহে অসুর বংশীয় পিতৃমাতৃহীন এক
অনাথ শিশু রাজার অনুগ্রহে রাজপুত্রদের সঙ্গে লালিত পালিত হয়েছিল। বয়েস বৃদ্ধির
সঙ্গে সঙ্গে বালকের অসীম সাহসিকতা ও বুদ্ধির প্রখরতা রাজা ও রাণীর মনে ভয়ের
সঞ্চার করেছে ভেবে, যুবক একদিন গোপনে কয়েকটি বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পূর্বদিকে চলে আসে এবং
প্রাগজ্যোতিষপুরের কিরাতরাজ ঘটকের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিরাতরাজ চতুরঙ্গ সেনা
সহ নরকের সঙ্গে যুদ্ধ করেন কিন্তু সংহতি শক্তিহীন কিরাতরা যুদ্ধে পরাজিত হয়, নরকের বশ্যতা স্বীকার করে, কতক লাঘব স্বীকার করতে অস্বীকৃত
হয়ে দেশান্তর পূর্বদিকে সাগরের পারে পলায়ন করে – কামরূপে মিথিলার কৃষ্টি মধ্যে
শিক্ষা প্রাপ্ত নরকের একাধিপত্য স্থাপিত হল।
(গ) প্রাচীন কামরূপে কোন কোন রাজবংশ
রাজত্ব করেছিলেন, তার বিবরণ দাও।
উত্তরঃ চতুর্থ শতিকায় যখন গুপ্ত সম্রাটদের অভুত্থানে ভারতে
হিন্দুরাজ্য সংগঠন ও হিন্দু ধর্ম পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, তখন আবার প্রাচীন কামরূপ রাজ্যে পুষ্যবর্মা নামক এক রাজার অভ্যুত্থান
হয়, তিনি নিজেকে নরক বংশীয় বলে পরিচয় দিতেন। প্রগতিশীল গুপ্ত সম্রাটদের
সঙ্গে বন্ধুত্বসূত্রে আবদ্ধ হয়ে দেশের সংস্কৃতি ভারতের পুনরুজ্জীবিত সংস্কৃতির
সঙ্গে একই গতিতে উন্নতির পথে চালিত করেছিলেন। সমুদ্র বর্মার রাজসূয় যজ্ঞে কামরূপ
রাজ আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। কামরূপ রাজ বর্ম্মা আনুমানিক ৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে কামরূপে
অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন। বর্মা বংশের পর শালস্তম্ভ বংশ কামরূপের অধীশ্বর হন, এরাও নিজেকে নরকের বংশধর বলে পরিচয় দিতেন – শালস্তম্ভ বংশের শেষ রাজা ত্যাগ সিংহ অপুত্রক অবস্থায় স্বর্গারোহন
করলে প্রকৃতিপুঞ্জ তাহাদের, পূর্বতন নরক বংশীয় ব্রহ্মপালকে
রাজসিংহাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। ব্রহ্মপালের বংশ ভৌম পাল বলে পরিচিত এবং
খ্রিস্টাব্দের দ্বাদশ শতিকা পর্যন্ত এই বংশ কামরূপে রাজত্ব করে গেছেন।
(ঘ) প্রাচীন কামরূপে কোন নীতি অনুসরণ
করে রাজবংশীয়রা রাজপদ পেতেন? উদাহরণ দিয়ে বোঝাও?
উত্তরঃ প্রাচীন কামরূপে রাজাপদ বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারীসূত্রে
জ্যৈষ্ঠেরই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু রাজগুণে বিভূষিত ও প্রজার মনোরঞ্জনে সমর্থ বলে
বিবেচিত না হলে এই নীতির ব্যতিক্রমও হত। শালস্তম্ভ বংশীয় বল বর্মার চক্র ও অরথি
নামক দুই পুত্র বড়ই উদ্ধত প্রকৃতির ছিলেন, তারা গুরুবাক্য অবহেলায় পটু
হওয়াতে কনিষ্ঠ অরথির পুত্রকে রাজ্যভার প্রদান করা হয়েছিল।
যেমন – সুপ্রতিষ্ঠিত বর্ম্মার মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ভাস্কর বর্মাই
রাজা হয়েছিলেন। ভাস্কর বর্ম্মার অপুত্রক অবস্তায় স্বর্গারোহন করলে তদ্রবংশীয়
অবন্থী বর্মা সিংহাসনারোহন করেন, কিন্তু এখনই রাজ্যে বিপ্লব উপস্থিত
হয়ে নতুন শালস্তম্ভ বংশ রাজ সিংহাসন্ন অধিকার করেন। শালস্তম্ভ বংশের শেষ রাজা
ত্যাগ সিংহ অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত হলে প্রকৃতিপুঞ্জ পূর্বাতন বংশের
ব্রহ্মপালকে রাজপদে বরণ করে।
(ঙ) কামরূপ শাসননীতি অনুসারে
মহাদ্বারাধিপতি, মহাপ্রতিহার ও মহাধর্মাধ্যক্ষের কাজ কী ছিল?
উত্তরঃ কামরূপ শাসন নীতি অনুসারে হর্জ্জর বর্মার রাজধানীর
মহাদ্বারাধিপতি ছিলেন জয়দেব। কামরূপ রাজ্য হর্জ্জরে বর্ম্মার মহাপ্রতিহারের নাম
ছিল জনার্দন। তিনি রাজার ব্যক্তিগত গৃহাধ্যক্ষ ছিলেন।
মহাধর্মাধ্যক্ষ আধুনিক প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
(চ) পঞ্চমহাশব্দ কী? তোমার পাঠ অবলম্বন করে এই বিষয়ে যা জানো লেখো।
উত্তরঃ ভাস্কর বর্মার নিধনপুর তাম্রলিপিতে শ্রীগোপাল নামক একজন কর্মচারীর
নামের পূর্বে একটি বিশেষ রকমের পদবী আছে। ‘‘আজ্ঞাশতং’ প্ৰাপয়িতা প্রাপ্ত পঞ্চমহাশব্দং শ্রীগোপাল’। এই প্রাপ্ত
পটমহাশব্দ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেন মহাসৈন্যপতি
মহাপ্রতীহারে ইত্যাদির যে কোন পাঁচটি উপাধিযুক্ত কর্মচারী।
অন্যতম হচ্ছে শিঙ্গা, তন্মট, শঙ্খ, ভরী ও জয়ঘণ্টা এই পাঁচটি যন্ত্রের ধ্বনিকে পঞ্চমহাশব্দ বলে। তন্ত্রী, তাল, ঝাঁপ, নাগরা ও কোন একটি বাতনিনাদ যন্ত্রের ধ্বনিকেও পঞ্চমহাশব্দ বলে। যে
কর্মচারীর সম্মানার্থে এই পঞ্চবিধ যন্ত্রের ধ্বনি করা হত তাকে প্রাপ্ত পঞ্চমহাশব্দ
বলা হত।
আর একটি মত হচ্ছে– পঞ্চমহাশব্দে পাঁচটি কর্মস্থান
বুঝায় । যিনি একা পাঁচটি কর্ম সংস্থানের দায়িত্বপূর্ণ কর্মের ভারপ্রাপ্ত
কর্মচারী ছিলেন তাঁকে প্রাপ্ত পঞ্চমহাশব্দ বলা হয় ।
উক্ত কর্মচারী ছিলেন ভূমিদানের রাজাজ্ঞা। ঘোষণাকারী তাঁর বিশেষ গুণ
ছিল যে তিনি পূর্বে এবম্বিধ শত আজ্ঞা শুদ্ধবাবে ঘোষণা করেছেন, সেইজন্য তিনি ‘আজ্ঞাশতং প্রাপয়িতা’ আবার এই ঘোষণা বার বার সময় শিঙ্গা, তন্মট, শঙ্খ, ভেরী ও জয়ঘণ্টা এই পঞ্চবিধ বাদ্য নিয়ে মহাধ্বনি করে সমস্ত লোকের
দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ আজ্ঞা প্রচার করেন – অর্থাৎ এই পঞ্চবিধ বাদ্যযন্ত্র
তার সঙ্গে আছে এবং এইগুলি নিয়েই তিনি রাজ আজ্ঞা প্রচার করবেন, মনে মনে বা চীৎকার করে শুধু কয়েকজন লোক মাত্র শুনবে এরূপভাবে বলবেন না।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। প্রায় কত বছর আগে ভারতের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে কোন জাতি অসমে
প্রবেশ করে?
উত্তরঃ প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর আগে ভারতের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে
অস্ত্রীক জাতি, অসমে প্রবেশ করে।
২। জাম্মেন পণ্ডিত স্মিটের মতে অস্ত্রীক জাতীয় মানুষ কীভাবে প্রাচীন
কামরূপে প্রবেশ করেছিল? এবং এদের এক শাখা কোন জাতির?
উত্তরঃ জার্ম্মেন পণ্ডিত স্মিটের মতে — এই জাতীয় মানুষ বর্তমান ইন্দো
চীনের উত্তর অঞ্চল থেকে এসে প্রাচীন কামরূপে প্রবেশ করেছিল। এবং এদের এক শাখা
দক্ষিণ বৰ্ম্মা ও শ্যামের মোন বা তালৈং জাতি।
৩। মিথিলা দেশের রাজার গৃহে কোন বংশীয় পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ শিশু পালিত
হয়েছিল?
উত্তরঃ মিথিলা দেশের রাজার গৃহে অসুর বংশীয় পিতৃ-মাতৃহীন এক অনাথ
শিশু রাজার অনুগ্রহে রাজপুত্রদের সহিত লালিত পালিত হয়েছিল।
৪। কোন ঘটকের সহিত নরক যুদ্ধে লিপ্ত হয়?
উত্তরঃ প্রাগ্জ্যোতিষপুরের কিরাতরাজ ঘটকের সহিত নরক এবং তার কয়েকজন
বন্ধুরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
৫। নরক কোথাকার কন্যা বিবাহ করেছিলেন?
উত্তরঃ নরক দাক্ষিণাত্যের বিদর্ভ নগরের খুব সম্ভবতঃ দ্রাবিড় জাতীয়
কন্যা বিবাহ করেছিলেন।
৬। নরকের পুত্রের নাম কি?
উত্তরঃ নরকের পুত্রের নাম ভগদত্ত।
৭। প্রাচীন কামরূপ রাজ্যে কোন রাজার অভ্যুত্থান হয়েছিল?
উত্তরঃ প্রাচীন কামরূপ রাজ্যে পুষ্যবর্ম্মা নামক এক রাজার অভ্যুত্থান
হয়েছিল।
৮। কামরূপ রাজ মহেন্দ্র বর্ম্মা কত খ্রিষ্টাব্দে কামরূপে অশ্বমেধ
যজ্ঞসম্পন্ন করেছিলেন?
উত্তরঃ কামরূপ রাজ মহেন্দ্ৰ বৰ্ম্মা আনুমানিক ৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে
কামরূপে অশ্বমেধ যজ্ঞসম্পন্ন করেছিলেন।
৯। বর্ম্মা বংশের পর কোন বংশ কামরূপের অধীশ্বর হন?
উত্তরঃ বর্ম্মা বংশের পর শালস্তম্ভ বংশ কামরূপের অধীশ্বর হন।
১০। শালস্তম্ভ বংশরা নিজেদের কোন বংশধর বলে পরিচয় দিতেন?
উত্তরঃ শালস্তম্ভ বংশরা নিজেদের নরকের বংশধর বলে পরিচয় দিতেন।
১১। শালস্তম্ভ বংশের শেষ রাজা কে?
উত্তরঃ শালস্তম্ভ বংশের শেষ রাজা ত্যাগ সিংহ।
১২। ব্রহ্মপালের বংশ কি বলে পরিচিত এবং কতশতিকা পর্যন্ত এই বংশ
কামরূপে রাজত্ব করেছেন?
উত্তরঃ ব্রহ্মাপালের বংশ ভৌম পাল বলে পরিচিত এবং খ্রিস্টাব্দের
দ্বাদশ শতিকা পর্যন্ত এই বংশ কামরূপে রাজত্ব করে গিয়েছেন।
১৩। সুপ্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মার মৃত্যুর পর কে রাজা হয়েছেন?
উত্তরঃ সুপ্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মার মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ভাস্কর
বর্মা রাজা হয়েছেন।
১৪। মহাসামন্ত কে?
উত্তরঃ সামন্তদিগের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ তিনিই মহাসামন্ত।
১৫। প্রধানমন্ত্রী হর্জ্জর মহামাত্যের নাম কি?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী হর্জ্জর মহামাত্যের নাম গোবিন্দ।
১৬। ভাস্কর বর্মার কায়স্থ কে ছিলেন?
উত্তরঃ ভাস্কর বর্মার কায়স্থ ছিলেন দুন্ধু নাথ।
১৭। ইন্দ্রপালের তাম্রলিপির তক্ষকার কে?
উত্তরঃ ইন্দ্রপালের তাম্রলিপির তক্ষকার অনি, ধনি, শনি – তিন ব্যক্তি।
১৮। হর্জ্জর বর্ম্মার রাজধানীর মহাদ্বারাধিপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ হর্জ্জর বর্ম্মার রাজধানীর মহাদ্বারাধিপতি ছিলেন জয়দেব।
১৯। মহাধর্ম্মাধ্যক্ষ বা মহাধম্মাধিকার কে ছিলেন?
উত্তরঃ মহাধর্ম্মাধ্যক্ষ বা মহাধর্ম্মাধিকার আধুনিক প্রধান বিচারপতি
ছিলেন।
২০। মহারাজ ভাস্করবর্মা নিধনপুর লিপিতে ভূমিদান করবার সময় কার মতামত
জিজ্ঞাসা করেছিলেন?
উত্তরঃ মহারাজ ভাস্কর বর্মা নিধনপুর লিপিতে ভূমিদান করবার সময়
ন্যায়করণিক জনার্দনের মতামত জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
২১। কামরূপ রাজ্য হর্জ্জর বর্ম্মার মহাপ্রতিহারের নাম কি? তিনি কার গৃহাধ্যক্ষ ছিলেন?
উত্তরঃ কামরূপ রাজ্য হর্জ্জর বর্ম্মার মহাপ্রতিহারের নাম ছিল
জনার্দন। তিনি রাজার ব্যক্তিগত গৃহাধ্যক্ষ ছিলেন।
২২। মহাপিলুপতি কে?
উত্তরঃ মহাপিলুপতি হস্তী খেদার প্রধান কর্মচারী।
২৩। হম শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ হম শব্দের অর্থ প্রাসাদ, সৌধ।
শব্দার্থ :
স্থিরীকৃত – নির্ধাবিত, যা স্থির (বা নির্দিষ্ট) করা হয়েছে।
প্রফুল্লচিত্ত – আনন্দিত।
সন্নিকটস্থ – কাছে অবস্থিত।
উপ্ত – বোনা হয়েছে এমন।
অধীশ্বর – অধিপতি, মহারাজ।
রাজ্যাপহারী – রাজ্য দখলকারী।
প্রকৃতিপুঞ্জ – জনসাধারণ।
উৎকীর্ণকারী – খোদাইকর, ভাস্কর।
এবম্বিধ – এই প্রকার, এরকম।
নিষ্কর – রাজস্বহীন, খাজনা দিতে হয় না এমন।
আনয়ন করা – নিয়ে আসা।
আনীত – আনা হয়েছে এমন।
হর্ম্য – প্রাসাদ, সৌধ।