Chapter 15 তাসের ঘর
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
(ক) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
একটি বিখ্যাত উপন্যাসের নাম করো।
উত্তরঃ তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাসের নাম ‘গণদেবতা’ ।
(খ) অমর শখ করে চায়ের বাসনের যে
সেটটা কিনেছিল তার দাম কত?
উত্তরঃ অমর শখ করে চায়ের বাসনের যে সেটটা কিনেছিল তার দাম চার টাকা।
(গ) অমরের স্ত্রীর নাম কী?
উত্তরঃ অমরের স্ত্রীর নাম শৈল।
(ঘ) অমরের জীবিকা কী ছিল?
উত্তরঃ অমর কলকাতায় অর্ডার সাপ্লাইয়ের ব্যবসায় করে।
(ঙ) শৈল-র বাপের বাড়ি কোথায়?
উত্তরঃ শৈলর বাপের বাড়ি এলাহাবাদ।
(চ) শৈলর বাবার (পিতার নাম কী?
উত্তরঃ শৈলর বাবার নাম মহেন্দ্র ।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) “বিচিত্র সংসার, বিচিত্র মানুষে মন, কোন কোথায় কে যে আঘাত পায় সে বোঝা, বোধ করি বিধাতারেও সাধ্য নয়” – এখানে কার মনের কথা বলা হয়েছে? এবং সে কোন কথায় আঘাত পেয়েছে, প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লেখো।
উত্তরঃ এখানে অমরের মায়ের মনের কথা বলা হয়েছে।
সে প্রবাসিনী গিন্নীর কথায় আঘাত পেয়েছে। কারণ প্রবাসিনী গিন্নীর
কাছে যখন শৈল তার বাবার বাড়ির আর্থিক সচ্ছলতাকে অনেক বড় করে তুলে ধরেছিল, তখন প্রবাসিনী গিন্নী শৈলর মুখে তার বাপের বাড়ির গল্প শুনে অমরের
মাকে বলেছিল যে ছেলের তো অনেক বড় ঘর, তা তারা তত্ত্বতাল্লাস করেন তো
ঠিকমতো। এই কথা শুনেই অমরের মা আঘাত পেয়েছিলেন।
(খ) কলকাতা প্রবাসিনী গিন্নীদের
সামনে শৈল বাপের বাড়ির তত্ত্বতল্লাস সম্বন্ধে কী বলেছিল?
উত্তরঃ কলকাতা প্রবাসিনী গিন্নিদের সামনে শৈল বাপের বাড়ির তত্ত্বতল্লাস
সম্বন্ধে বলেছিল যে তার বাবার অদ্ভুত ধরণ। শৈলর বাবা বলেন যে তিনি যে বস্তু দান
করলেন সে আবার তিনি কেন নিজের বলে নিজের ঘরে নিবেন। তবে যাকে তিনি দান করেছেন তিনি
যদি স্বেচ্ছায় নিয়ে আসে তখন তাদের আদর করবেন, সম্মান করবেন তাদের নিজের বলবেন। আর
তত্ত্বতল্লাস তো এত দূর থেকে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, কিন্তু টাকা তো চাইলেই দেন তিনি।
(গ) “শৈলর মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল” — শৈলর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার কারণটি কী?
উত্তরঃ শৈলর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার কারণ হল – যখন কলকাতা প্রবাসিনী গিন্নিরা এসেছিলেন তখন শৈল তার বাবার বাড়ির
স্বচ্ছল অবস্থার বর্ণনা অনেক বড়ো সড়ো করে বলেছিল। তখন প্রবাসিনী গিন্নি শৈলর
শাশুড়ী মাকে অকপটে বলে যে ছেলের তো অনেক বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে তোমাদের থেকেও বড়
ঘর তা বেয়াইরা তত্ত্বতল্লাস করে তো প্রবাসী গিন্নির কথার উত্তরে শৈল তখন পিতার
মহত্বকে প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক বড় মিথ্যে কথাও বলে ফেলে যে তার স্বামী অমরকে তার
পিতা টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। আর শৈলর মুখের এই কথাটি শুনে তার শাশুড়ি লজ্জায়, অপমানে, ক্রোধে একাকার হয়ে গেলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলে বাড়িতে এলে তাকে
জিজ্ঞেস করবেন। আর ঘটনার দশ দিন বাদেই অমর ছুটি উপলক্ষে কলকাতা থেকে বাড়িতে আসার
কথা জানাল। অমরের আসার খবরটি শুনেই শৈলর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল।
(ঘ) অমর বলিল, “ও বাড়িতে থাকলে আমি জলগ্রহণ করব না।” — এখানে ও বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? আর অমর ও বাড়িতে থাকলে কেন জলগ্রহণ করবে না?
উত্তরঃ এখানেও বলতে শৈলকে বোঝানো হয়েছে।
অমর যখন ছুটিতে বাড়ি আসে তখন তার মা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন যে অমর
তার নিজের রোজগারের অন্ন খাওয়ায় না তার শ্বশুরের দানের অন্ন সে তার মাকে
খাওয়ায়। কারণ শৈলর কথামত যে অমর নাকি তার শ্বশুরের কাছে টাকা চায় এবং তিনি টাকা
পাঠিয়ে দেন। একশো, পঞ্চাশ আমি যখন যেমন অমরের মাথা গরম হয় এবং সে শৈলকে জিজ্ঞাসা করে
এবং শৈল কী বলবে তা নির্ধারণ করে উঠতে পারেনি তাই বিহ্বলের মতো বলে ফেলে হ্যাঁ
বাবা দেন তো’ এতবর মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে না পেরে অমর দেওয়ালে তার মাথা কুটতে
থাকল। এবং শৈলকে উদ্দেশ্য করে বলল শৈল বাড়িতে থাকলে অমর জলগ্রহণ করবে না।
(ঙ) শৈলর বাপের বাড়ির লোক এতদিন
পর্যন্ত শৈলকে বাপের বাড়িতে আনেনি কেন?
উত্তরঃ শৈলর বাপের বাড়ির লোক এতদিন পর্যন্ত শৈলকে বাপের বাড়িতে
আনেনি কারণ শৈলর দাদার রোজগার কমে গেছে, ব্যবসার বাজার মন্দ। তার উপর শৈলর
বোন হৈমির বিয়ে এসেছে। তাই বেশি খরচ করতে পারছেন না শৈলর পিত্রালয়।
(চ) শৈলর পিতা কী ধরনের মানুষ ছিলেন?
উত্তরঃ শৈলর পিতা মহেন্দ্রবাবু নিরীহ ব্যক্তি, অত্যন্ত সাধু প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) “বিচারক যেখানে বিধিবদ্ধ বিধানের নামে ঘটে স্বেচ্ছাচার” – এখানে কোন বিচারের কথা বলা হয়েছে? বিচারের নামে কীরূপ স্বেচ্ছাচার গল্পে দেখানো হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে শৈলর অপরাধের বিচারের কথা বলা হয়েছে।
শৈল তার স্বামীর নামে মিথ্যে কথা বলেছিল যে তার স্বামী তার পিতার
কাছে অর্থ সাহায্য চেয়ে থাকে এবং শৈলর পিতা একশো, পঞ্চাশ, আশি যখন যেমন দরকার টাকা দিয়ে থাকেন। শৈলর এইটুকু অপরাধে তার বিচার
হয় এবং বিচারে শৈলর স্বামী অমর তাকে সেই রাত্রেই নির্বাসনের ব্যবস্থা করে। রাত্রি
বারোটার ট্রেনে শৈলর দেবর তাকে নিয়ে এলাহাবাদে রওনা হয়।
(খ) “তিনি স্বামীকে বলিলেন, দেখো তুমি বেয়ানকে একখানা পত্র
লেখো।” – এখানে কে কাকে পত্র লিখতে বলেছেন? এবং পত্রের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তরঃ এখানে শৈলর মা, শৈলর পিতা মহেন্দ্রবাবুকে পত্র
লিখতে বলেছেন।
পত্রের বিষয়বস্তু ছিল – মহেন্দ্রবাবু বেয়ানকে লিখেছেন যে
তিনি তার অনুগৃহীত ব্যক্তি, শৈলকে চরণে স্থান দিয়ে তিনি
মহেন্দ্রবাবুকে অশেষ অনুগ্রহ করেছেন। মহেন্দ্রবাবু আশা করেন ও প্রার্থনা করেন, সে অনুগ্রহ থেকে তিনি ও তার মেয়ে শৈল যেন কখনো বঞ্চিত না হন।
মহেন্দ্রবাবু লিখলেন যে, তিনি বুঝতে পারছেন না সেখানে কী ঘটেছে, শৈল কী অপরাধ করেছে, কিন্তু একটা অপরাধ যে শৈল করেছে তাতে তার কোনো সন্দেহ নেই। শৈল কোন
কথা প্রকাশ করেনি, তবুও এই দীর্ঘ দুমাসের মধ্যে তিনি বেয়ানের আশীর্বাদ পেলেন না।
শ্রীমান অমর ও কোনো পত্র দেন না। দয়া করে কী ঘটেছে তা যেন মহেন্দ্রবাবুকে জানানো
হয়। শৈলকে তিনি বেয়ানের চরণে উপস্থিত করে শাস্তি দেবেন।
পত্র শেষে আবার তিনি লিখলেন, যে অমর নিজে সংবাদ না দিলেও শৈলর
কাছ থেকে অমরের উন্নতির কথা শুনে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। কলকাতায় বাড়ি করবে শুনে
তিনি পরম আনন্দ পেলেন। তারপর মেজো ছেলের পরীক্ষার সংবাদ শুনেছেন যে কয়েক নম্বরের
জন্য প্রথম হতে পারে নাই। তাই তিনি আশীর্বাদ করছেন বি.এ তে এই ছেলে যোগ্য স্থান
লাভ করবে।
(গ) “পত্রখানা পড়িয়া অমরের মায়ের চোখে জল আসিল” – কার পত্র পড়ে এবং কেন অমরের মায়ের চোখে জল এসেছিল সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ শৈলর পিতা মহেন্দ্রবাবুর পত্র পড়ে অমরের মায়ের চোখে জল
এসেছিল।
অমরের মায়ের চোখে জল এসেছিল কারণ তার মনের ক্রোধ গলে গিয়েছিল।
প্রতি পদে তাঁর শৈলর প্রতিমার মতো মুখ মনে পড়ত। যদিও শৈল মিথ্যা বলে, বলুক, তবু মিষ্ট কথার সুরটি তাঁর কানে বাজত। আজ বেয়াইয়ের পত্র পড়ে তাঁর
মনের সকল গ্লানি নিঃশেষে বিদূরিত হইয়া গেল। শুধু বিদূরিত নয়, পুত্রবধুর উপর মন তাঁর প্রসন্ন হয়ে উঠল। পত্রের শেষ ভাগটুকু পড়ে
আবার তিনি সেখানটা পড়লেন যেখানে কলকাতায় বাড়ি বানানোর কথা লেখা আছে।
(ঘ) শৈল তার বাপের বাড়িতে
শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে কীসব (অলীক) গল্প করেছিল?
উত্তরঃ শৈল তার বাপের বাড়িতে শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে তার দাদাকে বলল – তাদের পুকুরে খুব বড় মাছ আধ মন, পণের সের পঁচিশ সের এক একটা মাছ।
এমনকী প্রথম যখন শৈল সে বাড়িতে গিয়েছিল তখন তার দেওর একটা আঠারো সের কাতলা মাছ
এনে তাকে কুটতে দিয়েছিল। প্রথমে সে ভয় পেয়েছিল, কিন্তু এখন সে ভয় পায় না। আধ মন, পঁচিশ সের মাছ, দিব্যি সে কেটে ফেলে।
তারপর শৈলর দাদা যখন শৈলকে বললেন যে তিনি কলকাতায় গেলে সময়ের অভাবে
অমরের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করতে পারেন না তখন শৈল বলে উঠে যে এইবার অমর কলকাতায় বাড়ি বানাবে।
জায়গা কিনেছে। দেশেও দালান করবেন।
শৈল তার শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে এভাবেই তাসের ঘর সাজিয়েছিল।
(ঙ) অমরের কাছে শৈল পাত্র কী কী আনতে
লিখেছিল এবং কেনই বা লেখো?
উত্তরঃ শৈল তার স্বামী অমরকে পত্র লিখেছে একটা বড় মাছ যেমন করে হউক
আনতে। আর ঝুটা মুক্তার একছড়া গহনা আনতে বলেছিল।
কারণ শৈল তার বাপের বাড়িতে শ্বশুরবাড়ি অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু
বানিয়ে সাজিয়ে বলেছে। তাই স্বামীর মান রক্ষার্থে তাকে এগুলো আনতে বলেছিল। কারণ
শৈল তার শ্বশুরবাড়ির মাছের অনেক গল্প করেছে আর বাপের বাড়িতে মুক্তার গহনার
প্রচলন নেই, তাই ঝুটা মুক্তার গহনা দেখিয়ে সে প্রমাণ করবে তার স্বামী কত ধনী।
তাই সে স্বামীকে পত্রে লিখে এতসব আনার কথা।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। অমর শখ করে কী কিনেছিল?
উত্তরঃ অমর শখ করে চায়ের বাসনের একটি সেট কিনেছিল।
২। অমরের অবিবাহিতা ভগ্নীর নাম কী?
উত্তরঃ অমরের অবিবাহিতা ভগ্নীর নাম গৌরী।
৩। অমরদের বাড়িতে কারা বেড়াতে এসেছিল?
উত্তরঃ অমরদের বাড়িতে কলকাতা প্রবাসী হরেন্দ্রবাবুরা বেড়াতে
এসেছিলেন।
৪। অমর কত সেরের মাছ কিনে এনেছিল?
উত্তরঃ অমর দশ বারো সেরের একটা মাছ কিনে এনেছিল।
৫। শৈলকে কে তার বাপের বাড়ি এলাহাবাদে পৌঁছে দিয়েছিল?
উত্তরঃ শৈলকে তার দেবর রাত্রি বারোটার ট্রেনে তার বাপের বাড়ি
এলাহাবাদে পৌঁছে দিয়েছিল।
৬। ‘তাসের ঘর’ গল্পের লেখক কে?
উত্তরঃ ‘তাসের ঘর’ গল্পের লেখক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়।
৭। চায়ের বাসনের সেটটির দাম কত ছিল?
উত্তরঃ চায়ের বাসনের সেটটির দাম ছিল চার টাকা।
৮। কারা দেশে এসেছিলেন?
উত্তরঃ কলকাতা প্রবাসী হরেন্দ্রবাবুরা দেশে এসেছিলেন।
৯। অমরের স্ত্রীর নাম কি?
উত্তরঃ অমরের স্ত্রীর নাম শৈল।
১০। শৈলের বাবার নাম কি?
উত্তরঃ শৈলের বাবার নাম মহেন্দ্র।
১১। অমর কোথায় কীসের ব্যবসা করে?
উত্তরঃ অমর কলকাতায় অর্ডার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করে।
শব্দৰ্থ :
রোষকষায়িত – ক্রোধে আরক্ত বা রেগে যাওয়া
অবস্থা।
অবকাশ – বিরাম, অবসর, ফুরসত।
প্রসাধন – অঙ্গসজ্জা, অঙ্গশোভাবর্ধন।
অত্যুক্তি – অতিরঞ্জিত বর্ণনা বা উক্তি, বাড়িয়ে বলা ।
উপাধান – বালিশ, শিয়রে রাখার নরম গদি।