AHSEC Class 11 Bengali(MIL) Chapter-19 রচনা

চা শিল্প অসমের এক অতি প্রাচীন এবং উল্লেখযোগ্য শিল্প। পৃথিবীতে চা-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অসমের চা এর এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। বর্তমান পৃথিবীর

 


Chapter-19 রচনা

১। অসমের চা শিল্প

চা শিল্প অসমের এক অতি প্রাচীন এবং উল্লেখযোগ্য শিল্প। পৃথিবীতে চা-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অসমের চা এর এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কাছে এক অতি আবশ্যকীয় পানীয় হল চা।

ভাত ছাড়াও চীন, জাপান, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে চা উপন্ন হয়। ভারতের ভিতর অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি অঞ্জলে চা উপন্ন হয়। ভারতে উপাদিত মোট চা এর ৬০ শতাংশ অসমে উপন্ন হয়।

পাহাড়ের গায়ের ঢালু জমি চা চাষের পক্ষে সব থেকে উপযোগী। অসমে এইরূপ জমি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পাহাড়ের এই ঢালু জমিতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন কিন্তু সেই জল জমে থাকলে চলবে না, অসমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অর্থা চা চাষ এর পক্ষে অসমের মাটি এবং জলবায়ু খুবই উপযোগী।

অসমে চা চাষ আরম্ভ হয় ইংরেজ আমলে। ইংরেজরা প্রথমে অসমে পরীক্ষামূলকভাবে চা গাছের চাষ আরম্ভ করেছিল। কিন্তু প্রথম অবস্থাতেই প্রচুর লাভ হওয়ার ফলে তারা শীঘ্রই প্রচুর পরিমাণে চা চাষ আরম্ভ করে এবং অসমে চা শিল্প গড়ে উঠে। ধীরে ধীরে এই শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটে। প্রথমে এই শিল্পের জন্য শ্রমিকের অভাব ছিল, কারণ স্থানীয় লোকেরা ধান চাষ বাদ দিয়ে চা চাষ করতে আগ্রহী ছিল না। সেজন্য ইংরেজরা বিহার, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি জায়গা থেকে প্রচুর শ্রমিক নিয়ে আসে চা শিল্পের জন্য। এইসকল শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে চা শিল্প ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং উন্নত হতে থাকে। বর্তমানে অসমে চা রপ্তানি করে প্রচুর লাভ হচ্ছে।

বছরে চারবার করে চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। শ্রমিকদের চা পাতা তোলার দৃশ্য মনোরম। একসঙ্গে দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি গাছ থেকে তোলা হয়। এই চা পাতা গাছ থেকে তোলার পরে রোদে শুকিয়ে মেসিনে গুঁড়া করা হয়।

গরম জলের মধ্যে এই গুঁড়া চা পাতা, চিনি, দুধ দিয়ে ফুটিয়ে চা প্রস্তুত করা হয়। অনেকে আবার শুধু চিনি ও চা পাতা জলে ফুটিয়ে লেবুর রস দিয়েও খান। চা-এর অনেক উপকারিতা আছে। চা খেলে দেহ এবং মনের অবসাদ দূর হয়। চা দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। অসমের চা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

অসমের অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চা শিল্পের এক বিরাট অবদান আছে। অসমে চা বাগান গুলোতে প্রচুর শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থা খুবই দরিদ্র। শ্রমিকদের অবস্থায় উন্নতি হলে অসমের চা শিল্পেরও সামগ্রিকভাবে উন্নতি সম্ভব হবে।

২। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব

১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দে আসামের নগাঁও জেলার আলিপুখুরি নামক গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কুসুমবর ভূঁইয়া ও মায়ের নাম সত্যসন্ধ্যা। শৈশবকালে শঙ্করদেব পিতামাতাকে হারিয়ে পিতামহী খেরসূতী কর্তৃক লালিত পালিত হন। বাল্যকালে তিনি ছিলেন খুবই দুরন্ত স্বভাবের। সে জন্য কিছুটা বিলম্বে তাঁর বিদ্যাশিক্ষা শুরু হয়তেরো বছর বয়সে তাঁকে মহেন্দ্র কন্দলীর পাঠশালায় ভর্তি করা হয়। মহেন্দ্র কন্দলীর পাঠশালায় পড়াকালীন সময়ে তিনি আটপংক্তি বিশিষ্ট একটি ঈশ্বর স্তোত্র রচনা করে সবাইকে বিস্মিত করে দেন এবং এর ফলে গুরুর কাছ থেকে দেবউপাধি লাভ করেন।

শঙ্করদেব ছিলেন একই সঙ্গে গৃহী ও সন্ন্যাসী। তাঁর প্রথমা স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান রেখে মারা গেলে তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর গর্ভে তিনি তিনটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান লাভ করেন। সংসার ধর্ম রক্ষা করে চললেও তিনি মূলত একনিষ্ঠ আধ্যাত্ম সাধনা ও বিদ্যাচর্চায় রত ছিলেন। বিভিন্ন শাস্ত্র ও ধর্মচর্চা করে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বর সর্বব্যাপ নিরাকার ও অব্যক্ত। তাঁর প্রবর্তিত ধর্ম নব বৈষ্ণবধর্মবা এক শরণ ধর্মনামে পরিচিত। চৈতন্য দেবের বৈষ্ণব ধর্মের মতো শঙ্করদেবের ধর্মাদর্শও ছিলেন সম্বনরবাদীও সর্বমানবিক।

শঙ্করদেব শুধু ধর্মীয় জীবনের পরিত্রাতা হিসাবেই নয়, অসমীয়া সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপয়িতা রূপেও স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর সাহিত্য কীর্তি অসমীয়া সাহিত্যের পরমসম্পদ হিসাবে আজও সমাদৃত হয়ে আছে। তিনি সর্বমোঠ পঁয়ত্রিশটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে গদ্যগ্রন্থ কাব্য নাটক প্রভৃতি রয়েছে। শঙ্করদেব রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে ভক্তিরত্নাকর, ভাগবতপুরাণ, হরিশ্চন্দ্রের উপাখ্যান, কালীয় দমন, রুক্মিণী হরণ পারিজাত হরণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচিত নাটকগুলো অংকীয়া নাটকনামে পরিচিত। শঙ্করদেব রচিত বরগীতঅসমের সমাজ জীবনে মঙ্গল-সংগীত হিসাবে সমাদৃত হয়ে আসছে।

১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে ১১৯ বছর বয়সে কোচবিহারের ভেলামপুরিতে শঙ্করদেবের মহাপ্রয়াণ ঘটে। সমাজ, সাহিত্য, ধর্ম, সর্বক্ষেত্রেই তিনি আসামবাসীকে আলোকের সন্ধান এনে দিয়েছেন। তাঁর পূণ্যস্মৃতির প্রতি রইল আমাদের স্বশ্রদ্ধ প্রণাম।

৩। তোমার প্রিয় লেখক

প্রতিটি পাঠকেরই এক একজন প্রিয় লেখক থাকেন। ব্যক্তিগত রুচি, মানসিকতা ও জীবনবোধ অনেক লেখকের মধ্যে বিশেষ কোন লেখককে একজনের কাছে প্রিয় করে তোলে। এই হিসেবে আমার প্রিয় লেখক হল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

আমি তারশঙ্করের লেখা রাইকমল, কবি, ধাত্রীদেবতা, কালিন্দী, গণদেবতা, পনগ্রাম, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, বেদেনী তামসতপস্যা, আরোগ্য নিকেতন প্রভৃতি অধিকাংশ উপন্যাসই পড়েছি। এই সকল উপন্যাস তাঁর কাহিনির বৈচিত্র্য, বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী, বলিষ্ঠ, জীবনবোধ, গভীর যুগ সচেতনতার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছি। কোন উপন্যাসে দেখা যায় গায়ক, কবির অপূর্ব প্রেম সাধনা আবার কোন উপন্যাস সামন্ততান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তির দ্বন্দ্ব। তারাশঙ্কর এই যুগের মর্মস্পন্ধন যথার্থ অনুধাবন করে সাহিত্যের মধ্যে তার রূপায়তি করেছেন।

তারশঙ্করের উপন্যাসগুলো যেন এক বিচিত্র বর্ণাঢ্য চরিত্রের গণমিছিল। তাঁর উপন্যাসে আছে অভিজাত ও অনিভজাত দুই শ্রেণির বিচিত্র চরিত্র। জমিদার, প্রজা, শ্রমিক, সাঁওতাল, বাজিকর, বেদে, বৈষ্ণব, বাউল, যাত্রাওয়ালা প্রভৃতি বিচিত্র চরিত্র তাঁর উপন্যাসে আপন আপন বৈশিষ্ট্য সমুজ্জ্বল। শুধু চরিত্রের বৈচিত্র্যে নয়, জীবনের অভিজ্ঞতা স্পর্শে তাঁর প্রতিটি কাহিনি যেন সজীব ও মর্মস্পর্শী। তিনি তাঁর উপন্যাসে সুন্দরের পাশাপাশি অসুন্দরের জীবনচিত্র ও যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

তারাশঙ্করে উপন্যাসে কোথাও কৃত্রিমতা নেই, তাঁর চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে সজীবতা ধরা পড়ে। তিনি যথার্থ জীবনশিল্পী।

৪। অসমের বিহু উসব

প্রত্যেক দেশেই এমন এক একটি উসব থাকে যার মধ্য দিয়ে দেশের অধিবাসীদের সামগ্রিক পরিচয় ফুটে উঠে। এই ধরনের উসবকেই জাতীয় উসবের মর্যাদা দেওয়া হয়। এদিক থেকে দেখলে বিহু উসবকেই আসামের জাতীয় উসব বলতে হয়। কারণ এই উসবটির মধ্য দিয়ে সমস্ত অসমীয়া জাতির ধর্ম সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনের সুন্দরে রূপটির প্রকাশ ঘটে থাকে।

সবের কাল  বিহু শব্দটি বিষুবশব্দের রূপান্তর। প্রতি বসরে বিষুব সংক্রান্তি অর্থা চৈত্র মাসের সংক্রান্তি দিনে এই উসব অনুষ্ঠিত হয় বলে এই নামে পরিচিত। চৈত্র মাসের বিহুছাড়া আরো দুটি বিহু উসব প্রচলিত আছে। পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় ভোগালী বিহুএবং আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি দিবসে অনুষ্ঠিত হয় কাতি বিহুচৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত বিহু উসবটি রঙালিবিহু নামে পরিচিত এবং ব্যাপকতা ও বর্ণাঢ্যে এটাই আসামের জনসমাজে প্রধান উসবের স্থান অধিকার করেছে।

সবের বিবরণ  ‘রঙালি বিহুচৈত্র সংক্রান্তিতে শুরু হয় এবং বৈশাখের সপ্তম দিবসে সম্পন্ন হয়। রঙালিকথাটির মধ্যে যে আনন্দময়তার ইঙ্গিত আছে রঙালি বিহুতে তারই অবাধ প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। বাসন্তী প্রকৃতির মনোরম পটভূমিকায় এই উসব অনুষ্ঠিত হয়। পত্র পুষ্প বিভূষিত প্রকৃতির আনন্দময়তা আবার বৃদ্ধ নর-নারীর হৃদয়ে সঞ্চারিত হয়ে সকলকে আনন্দে মাতোয়ারা করে তোলে। পুন্যস্থান, দান-ধ্যান, পূজার্চনা প্রভৃতি কাজ কর্মের মধ্য দিয়ে উসবের প্রথম দিনটি অতিবাহিত হয়। গবাদি পশুর প্রতিও এই দিন বিশেষ যত্ন লওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন হতে নৃত্য সংগীতের মধ্য দিয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রমোদ উসবের সূত্রপাত হয়। নূতন বসন পরে আবাল বৃদ্ধবনিতা উসব আঙ্গিনা সমবেত হয়। বাঁশির সুরে মাদলের আওয়াজে আকাশ বাতাস মুখর হয়ে উঠে। প্রিয়জনকে গামছাউপহার দেওয়া এই উসবের প্রধান অঙ্গ।

কাতি বিহুবা কঙ্গালী বিহু ধনদাত্রী লক্ষ্মী দেবীর কাছে শস্য সম্পদ প্রার্থনা করা হয়। পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত বিহু উসবে আনন্দ ভোজন প্রাধান্য পায়, তাই বোধহয় এর নাম ভোগালী বিহু। শস্য ভাণ্ডারের শস্য সঞ্চয়ের পরে প্রিয় পরিজনকে ভোজনে পরিতৃপ্ত করার আনন্দ লাভ এর প্রধান উদ্দেশ্য।

সবের তাপর্য – বিহু উসব মূলত গ্রামীণ মানুষের কৃতি উসব। এর মধ্য দিয়ে ঋতুর আহ্বান, মৃত্তিকার উর্বরতা প্রার্থনা, শস্য সংগ্রহের অভিলাষ ইত্যাদি সামাজিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে। এগুলিকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক শুভ কামনা ও সামাজিক মিলনের অবকাশ ঘটে। তদুপরি নৃত্যে সংগীতাদিতে শিল্প সংস্কৃতির বিশিষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। বস্তুত বিহু উসবে আসামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বিধৃত রয়েছে।

উপসংহার  কালের পরিবর্তনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী ও রীতি-নীতির পরিবর্তন ঘটে। দেশের উসব কলা ও এই পরিবর্তনের প্রভাব অস্বীকার করতে পারে না। তাই আসামের জাতীয় উসব বিহুর বাইরে কোথাও আধুনিকতার ছাপ পড়েছে কোথাও বা প্রমোদ অনুষ্ঠানের প্রকৃতিগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির ক্রোড়ে লালিত গ্রামীণ জীবনে বিহু উসবের অমলিন আনন্দ ধারা আগের মতোই প্রবাহমান।

-000-

DOWNLOAD PDF NOW

About the author

Team Treasure Notes
We're here to make learning easier for you! If you have any questions or need clarification, feel free to drop a comment we’d love to help!

Post a Comment