Chapter-3 বর্ষায় লোকের অবস্থা
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) ধনি শব্দের অর্থ লেখো।
উত্তরঃ ধনি শব্দের অর্থ সুন্দরী স্ত্রী।
(খ) ‘প্রতি হাতে মারে …………….‘শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
উত্তরঃ প্রতি হাতে মাড়ে আড়ী।
(গ) ছুটি পাওয়ার পরও রাঙা চোখ কে
দেখায়?
উত্তরঃ ছুটি পাওয়ার পরও রাঙা চোখ দেখায় চৌকীদার।
(ঘ) টোলে কতদিন পাঠ বন্ধ থাকে?
উত্তরঃ টোলে তিন মাস পাঠ বন্ধ থাকে।
(ঙ) চাল কাঠ কে দেন?
উত্তরঃ ভট্টাচার্য্য চাল কাঠ দেন।
(চ) বাদা কী?
উত্তরঃ বাদা হচ্ছে জলাভূমি।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) বন্যার্ত সাধারণ মানুষ কী কী খান?
উত্তরঃ বন্যার্ত সাধারণ মানুষ দেশের এক দুঃখময় পরিস্থিতির মুখোমুখি
হন। চারদিক যখন জলমগ্ন তখন গ্রামের বন্যার্ত সাধারণ মানুষ শুধু জল, শাক, অড়হর ডাল ইত্যাদি আধপেটা খেয়ে দিন কাটান।
(খ) বর্ষায় রান্নাঘরের অবস্থা কেমন
থাকে?
উত্তরঃ বর্ষায় রান্না ঘরের অবস্থা খুব শোচনীয় হয়। রান্নাঘর যেন
কাদার হাট হয়ে যায়। রান্না ঘরের কাঠ ও ভিজে থাকে আর মাটির উনুনও ভিজে থাকে। তাই
কোনোমতেই চুলো জ্বালানো সম্ভব হয় না।
(গ) বন্যার সময় টোলের কী অবস্থা হয়?
উত্তরঃ বন্যার সময় টোল পাঠশালা বন্ধ থাকে। বন্যায় সব পুথিপত্র ভেসে
যায়। তিনমাস টোলের পড়াশোনা বন্ধ থাকে।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) বন্যায় ধনী ব্যক্তিরা কীভাবে
থাকেন তার বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ ঈশ্বর গুপ্তের কবি চেতনায় আধুনিকতা, অন্যতম নিদর্শন হলো তাঁর ঋতু বর্ণনা বিষয়ক কবিতা সম্ভার। আলোচ্য
কবিতাটি তারই নিদর্শন। ঈশ্বর গুপ্তের কবিতাতেই বাঙলা দেশের নিসর্গ প্রকৃতি
সর্বপ্রথম পার্শ্ব চরিত্রের সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে
ঈশ্বর গুপ্তের রঙ্গরস পরিবেশনের ক্ষমতা কেমন ছিল তা এই কবিতায় ফুটে উঠেছে।
সামাজিক ব্যবস্থাদির যে ত্রুটি রয়েছে তা তাঁর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সহজেই ধরা পড়ে
এবং সেই ত্রুটিকে ব্যঙ্গের সহজ নির্মল আনন্দে ঈশ্বর গুপ্ত কীভাবে পাঠককে ধরিয়ে
দেন, তা এই কবিতাটি পড়লে বোঝা যায়। কবিতাটি বর্ষণ ক্লান্ত বাংলা দেশরে
দুঃখময় পরিস্থিতি নিয়ে লেখা। বর্ষায় চারিদিক যখন জলমগ্ন হয়ে উঠেছে তখন গ্রামের
লোকেরা দৈনন্দিন জীবন চলতে ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হন। যেমন রান্নাঘর জলে মগ্ন
হওয়াতে কাঠ, মাটি সব ভিজে যায় ফলে রান্নার জন্য কোনমতে চুলো জ্বালানো সম্ভব হয়
না। অথচ ঐ রকম পরিস্থিতিতে যখন বর্ষায় ক্লান্ত চারদিক তখন সমাজের ধনী লোকদের কোনো
সমস্যা হয় না। তারা সুখেই দিন অতিবাহিত করে। কারণ তাদের বাড়ি ও ভালো, তাই রান্নাঘরে চুলো জ্বালানোর সমস্যা হয় না, আবার তাদের গাড়িও আছে তাই রাস্তায় চলতেও কোনো অসুবিধে হয় না। তাই
আহারেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না। তারা মনের মত আহার বিহার করতে পারেন। মনের মতো
আড় মাছ খেতে পারে।
(খ) বন্যাকে উপলক্ষ করে সমাজের ধনী ও
গরিবদের মধ্যে কবি যে পার্থক্যের ছবি এঁকেছেন তা তোমার পাঠ অবলম্বনে লেখো।
উত্তরঃ ঈশ্বর গুপ্তের কবি চেতনায় আধুনিকতা অন্যতম নিদর্শন হলো তাঁর
ঋতু বর্ণনা বিষয়ক কবিতা সম্ভার। আলোচ্য কবিতাটি তারই নিদর্শন। ঈশ্বর গুপ্তের
কবিতাতেই বাংলাদেশের নিসর্গ প্রকৃতি সর্বপ্রথম পার্শ্ব চরিত্রের সঙ্গে বর্ণিত
হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে ঈশ্বর গুপ্তের রঙ্গরস পরিবেশনের ক্ষমতা কেমন
ছিল তা এই কবিতায় ফুটে উঠেছে। সামাজিক ব্যবস্থাদির যে ত্রুটি রয়েছে তা তাঁর
সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সহজেই ধরা পড়ে এবং সেই ত্রুটিকে ব্যঙ্গের সহজ নির্মল আনন্দে
ঈশ্বরচন্দ্র কীভাবে পাঠককে ধরিয়ে দেন, তা এই কবিতাটি পড়লে বোঝা যায়।
কবিতাটি বর্ষণক্লান্ত বাংলা দেশের দুঃখময় পরিস্থিতি নিয়ে লেখা। চারদিক যখন
জলমগ্ন, তখন গ্রামের মানুষের যে দুঃখময় পরিস্থিতি হয়েছে তা কবিতাটিতে
দেখানো হয়েছে। জলে এমন অবস্থা হয়েছে যে চারদিকে যেন কাঁদার হাট বসেছে। অথচ তার
মধ্যেও কবি দেখিয়েছেন সমাজের দুই শ্রেণীর লোকের পার্থক্য। অর্থাৎ এত জলমগ্ন পরিস্থিতিতেও
দেখা গেছে ধনী ও গরিবদের পার্থক্য। বন্যায় যেখানে গরিবদের খাওয়া বন্ধ হয়েছে।
রান্না ঘরের চুলো জলে ভিজে গেছে, ভিজে কাঠ ও ভিজে মাটিতে কোনো প্রকারে
চুলো জ্বালানো সম্ভব হয়নি। সেখানে ধনীরা মনের মতো আড় মাছ ধরেছে খাওয়ার জন্য।
ভাল গাড়ি ও ভাল বাড়ির সুখ অনুভব করছে সুখী স্ত্রীরা। বন্যা উপলক্ষে তাদের কোনো
মনের বিকার নেই। তাদের আচারে অন্যায় ব্যাভিচার দেখা দেয়। কিন্তু অন্যদিকে
গরিবেরা এসব সুখ কোনো ভাবেই লাভ করতে পারেনি। গরিবেরা শুধু জল খেয়েই দিন যাপন
করেন। টাকার অভাবে তাদের বুদ্ধিও লোপ পায়। গ্রামের সাধারণ গরিব মানুষ শুধু
শাক-অড়হর ভাল ইত্যাদি আধপেটা খেয়ে দিন কাটায় আর ধনী ব্যক্তির বাড়িতে সুখের
বন্যা বয়ে চলে। এই শ্রেণি বৈষ্যমই কবি বন্যা উপলক্ষে কবিতাটিতে দেখিয়েছেন।
(গ) বর্ষার সময় সাধারণ মানুষ কীভাবে
খাবার জোগাড় করেন তা লেখো।
উত্তরঃ কবিতাটি বর্ষণক্লান্ত বাংলা দেশের দুঃখময় পরিস্থিতি নিয়ে
লেখা। চারদিক যখন জলমগ্ন, টোল-পাঠশালা সব বন্ধ, গ্রামের মানুষ শুধু শাক-অড়হর ভাল ইত্যাদি দিয়ে আধপেটা খেয়ে দিন
কাটাচ্ছে কারণ বর্ষায় প্লাবিত তাদের রান্নাঘর। জলে তাদের চুলো ভিজে গেছে, রান্নার কাঠ ভিজে গেছে। তাই উনুন জ্বলছে না। অথচ সেই সময় একই
পরিস্থিতিতে ধনী ব্যক্তির বাড়িতে সুখের বন্যা তারা আড় মাছ খাওয়ার ব্যবস্থা
করছে।
(ঘ) বর্ষায় লোকের যেমন অবস্থা হয়
তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তরঃ বর্ষায় যেমন লোকের অবস্থা হয়, তার একটি সরস বর্ণনা তুলে ধরেছেন
কবিতাটিতে। বিশেষ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে ঈশ্বর গুপ্ত রঙ্গরস পরিবেশনের দক্ষতা
দেখিয়েছেন। কবিতাটি বর্ষণক্লান্ত বাংলা দেশের দুঃখময় পরিস্থিতি নিয়ে লেখা।
চারদিক যখন জলমগ্ন, টোল পাঠশালা সব বন্ধ, কারণ বই পত্র সব জলে ভেসে যায়।
তিনমাস পাঠশালার পড়া বন্ধ থাকে। রান্নাঘর জলে মগ্ন, কাঠের উণুন জলে ভেজা তাই চুলা
জ্বালানোর উপায়ও নেই। তাই কোনো রকমে গ্রামের লোকেরা শুধু শাক ও অড়হর ডাল ইত্যাদি
খেয়ে আধপেটা দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে তখন ধনী ব্যক্তির ঘরে সুখের বন্যা বয়ে
চলেছে। ভালো ঘর, ভালো গাড়ি নিয়ে বন্যার দুরবস্থা থেকে অনেক দূরে। তারা মনের মতো
খাবার খেতে ব্যস্ত। অন্যায় অবিচারে তা প্রলুব্ধ। তাই দেখা গেছে বর্ষায় গরিবদের
যেমন দুঃখময় পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে অন্যদিকে ধনী ব্যক্তিরা সুখময়
দিন কাটিয়েছে।
শব্দার্থ :
কান্নাহাটী – কাঁদার হাট বা জায়গা।
ধনী – বিত্তশালী ব্যক্তি।
সদাচার – ভালো আচরণ।
টোল – গ্রামের পাঠশালা।
দণ্ড – সময়ের বিভাগ, এক মুহূর্ত।
কদাচার – অন্যায় আচরণ, অনাচার, ব্যভিচার।
ধনি – সুন্দরী স্ত্রী।
স্থির – নিশ্চিত।
পাগ – পাগড়ি, শিরস্ত্রাণ।
পুঁতি-পাঁতি – বইপত্র।
মিত্রজরে – বন্ধুপুত্রকে।
চাল – ঘরের ছাউনি।
বাদলায় – বৃষ্টিতে।
প্ৰমাদ – বিপদ।
-000-