Chapter-6 মায়াতরু
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) তরু মানে কী?
উত্তরঃ তরু মানে গাছ।
(খ) শরীরের কোন অঙ্গে মুকুট পরা হয়?
উত্তরঃ শরীরের শীর্ষ অঙ্গে অর্থাৎ মাথায় মুকুট পরা হয়।
(গ) আবছায়া অর্থ কী?
উত্তরঃ আবছায়া অর্থ হল অস্পষ্ট আলো, আলো-আঁধারি।
(ঘ) কার শরীরে কম্প দিয়ে জ্বর আসত?
উত্তরঃ গাছের শরীরে কম্প দিয়ে জ্বর আসত।
(ঙ) মাছেরা উধাও হত কখন?
উত্তরঃ মাছেরা উধাও হত সকাল বেলায়।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) ‘সন্ধে নামলে’ গাছটা কী করত?
উত্তরঃ কবি কল্পনার এক অভিনব সৃষ্টি মায়াতরু। যে তরু ক্ষণে ক্ষণে
তার রূপ বদলায়, আলো-অন্ধকারের তারতম্যের ফলে নানা ধরনের রূপচিত্র সৃষ্টিতে কবিকে
উপকরণ যোগায়। সন্ধ্যে নামলেই গাছটা দুহাত তুলে ভূতের নাচ করতো।
(খ) ভালুকের জ্বর বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ভালুকের জ্বর বলতে যেই জ্বর কোনো কারণ ছাড়াই আসে আবার নিজে
থেকেই সেরে যায়। আলোচ্য কবিতাটিতে গাছের ভালুকের জ্বর হয়েছিল। সন্ধ্যে হলেই সেই
গাছ দুহাত তুলে ভূতের নাচ নাচত আবার যখন আকাশে মেঘ করত তখন ভালুকের মতো গরগর করত।
আর বৃষ্টি হলেই গাছের কম্প দিয়ে জ্বর আসত, আবার এক পশলার বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলে
গাছের আবার জ্বর ভালো হয়ে যেত।
(গ) ভালুকের শরীর বা মাথার সঙ্গে
গাছের শরীরের মিল আছে কি? এমন মিল কখন পেয়েছেন কবি?
উত্তরঃ ভালুকের শরীর বা মাথার সঙ্গে গাছের শরীরের মিল নেই। কিন্তু
কবির কল্পনার গুণে এই গাছ মায়া তরুতে পরিণত হয়েছে। তাই কবি ভালুকের শরীর বা
মাথার সঙ্গে গাছের শরীরের মিল খুঁজে পেয়েছেন। সন্ধ্যে বেলায় যখন বনের মাথায় মেঘ
দেখা দিত বিদ্যুতের ঝলকে তখন গাছ ভালুকের মতো ঘাড় ফুলিয়ে গড় গড় করত আবার যখন
বৃষ্টি নামত তখন ভালুকের মতো গাছের কেঁপে জ্বর আসত। আবার এক পশলা বৃষ্টি শেষে
গাছের জ্বর ভালো হয়ে যেত।
(ঘ) ভূতের নাচের বিশেষত্ব কী?
উত্তরঃ ভূতের অর্থ অপদেবতা, অশরীরী। এরা অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে
মানুষকে ভয় দেখায়। ভূতদের ক্রিয়া কর্ম খুব ছন্দোময় নয়। অন্ধকারে হাওয়ায়
গাছের মাথা এদিক-ওদিক খেয়াল-খুশি দোলে, ভয় ভয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এমন
দোলকেই ভূতের নাচ বলে মনে হয়েছে। এখানেই ভূতের নাচের বিশেষত্ব।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) ‘মুকুট হয়ে ঝাঁক বেঁধেছে লক্ষ হীরার মাছ’—কথাটা নিজের ভাষায় বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ কবি কল্পনার এক আশ্চর্য সফল হচ্ছে মায়াতরু। এই কবিতাটিতে
মায়াতরু হচ্ছে মায়ার গাছ যে গাছ সন্ধ্যে হলেই দুহাত তুলে ভূতের মতো নাচে আবার
যখন হঠাৎ বনের মাথায় ঝিলিক মেরে
মেঘ উঠতো। তখন ভালুক হয়ে ঘাড় ফুলিয়ে সেই
গাছ গরগর করত। আবার এক পশলার শেষে যখন চাঁদ উঠত সেই ভালুক, গাছ সব উধাও হয়ে যেত এবং সেখানে মুকুট হয়ে লক্ষ হীরার মাছ ঝাঁক
বাঁধতো।
(খ) মায়াতরু নামের সার্থকতা দেখাও।
উত্তরঃ গাছের আরেকটি নাম তরু। কবি দৃষ্টির অপরূপ একটি গাছ দিনরাতের
আলো-আঁধারে বহুরূপী হয়ে ওঠে। কবির দৃষ্টিতে গাছটি মায়াতরু কারণ, যেই গাছটির কথা কবি বলেছেন সেই গাছটি সন্ধ্যে হলেই দু-হাত তুলে ভুতের
নাচ নাচত। আবার যখন আকাশে ঝিলিক দিয়ে মেঘেরা ভালুকের মত গড়গড় করত আর তখন বৃষ্টি
নামলেই যেন গাছের কাঁপিয়ে জ্বর আসত। এক পশলা বৃষ্টির পরে যখন আকাশে চাঁদ উঠত তখন
আর গাছের জ্বর কোথায় মিলিয়ে যেত। তখন মনে হত যেন গাছের মাথায় লক্ষ হীরার মাছ
মুকুট হয়ে শোভা পায়। আবার ভোরবেলায় রাতের মায়াবী রূপের কোনো চিহ্নই থাকত না, কবি বুঝে পেতেন না সকাল বেলায় দেখে একটি মাছও নেই শুধু পড়ে থাকত
রূপালি এক ঝালর। রাতের বেলায় যেই গাছ ভূতের নাচ দেখায় আর সকাল বেলায় রূপালি
ঝালরে সাজে সেই রূপ গাছকেই কবি মায়াতরু বলেছেন। তরু হয়েও আলো আঁধারে এই মায়াবী
রূপ ধারণ করার জন্য ‘মায়াতরু’ নামটি সার্থক হয়েছে।
(গ) কবিতার কোন অংশটা কেন তোমার সব
থেকে ভালো লেগেছে বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ কবিতার প্রথম অংশটা আমার সব থেকে ভালো লেগেছে।
কারণ কবি প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে গাছের অশরীরী অর্থাৎ ভূতের নাচ ব্যাপারটিকে
সত্যি করে তুলেছেন। যেমন সন্ধ্যে বেলায় আসলে ভূতেরা খেলা দেখায় আর গাছটিও সন্ধ্যে
বেলাতেই দুহাত তুলে নাচত। আবার বৃষ্টি আসার আগে আকাশে যখন বিদ্যুৎ চমক দিয়ে মেঘেরা গরগর
করত সেই দৃশ্যটিকে কবি ভালুকের সঙ্গে তুলনা করে দেখিয়েছেন। আর বৃষ্টি হলেই গাছের
কম্প দিয়ে জ্বর আসত অর্থাৎ বৃষ্টি যখন গাছের উপর বর্ষিত হয় তখন গাছের ঠিক এরকমই অবস্থা হয়। আর
ভালুকের জ্বর ক্ষণস্থায়ী তাই বৃষ্টির শেষে গাছ আবার যখন চাঁদের আলোতে চিকচিক্ করে
উঠত তখন আর জ্বর থাকত না। সেজন্য গাছের জ্বরকে ভালুকের জ্বরের সঙ্গে তুলনা করা
হয়েছে। প্রথম অংশের এই দৃশ্যটি যেন একেবারে বাস্তব হয়ে উঠেছে বহুরূপীর মত। তাই
অংশটি আমার সব থেকে ভালে লেগেছে।
(ঘ) কবিতায় কটা ছবি আছে? প্রত্যেকটির কথা সংক্ষেপে জানাও?
উত্তরঃ কবিতায় চার রকমের ছবি আছে।
সন্ধ্যে থেকে রাত পেরিয়ে প্রথম সকাল পর্যন্ত নানা সময়ে চারটি
চেহেরা একই তরুর মধ্যে দেখতে পেয়েছেন কবি। চার রকমের সত্য মায়াজাল রচনা করেছে।
প্রথম ছবি গাছের দু-হাত তুলে নাচা অর্থাৎ হাওয়ার উপস্থিতি।
দ্বিতীয় ছবি আলো-আঁধার, বিদ্যুৎগর্ভ মেঘের গরগর তারপর
বৃষ্টি এবং বৃষ্টি হলেই ভালুকের মতো কম্প দিয়ে গাছের জ্বর আসা।
তৃতীয়ত বৃষ্টি শেষে চাঁদের হাসি, অর্থাৎ এক পশলা বৃষ্টির পরে
আকাশে যখন চাঁদ দেখা দিত তখন ভালুকের
ক্ষণস্থায়ী জ্বরের মতো গাছের ও জ্বর সেরে যেত, আর চাঁদের আলোতে গাছের মাথাগুলো
হীরার মুকুটে শোভা পেত।
চতুর্থ দৃশ্য সকালের আলো, যখন কবি ঝিকির মিকির রূপালি আলোর
ঝালরে আর একটি মাছও খুঁজে পান না।
(ঙ) কবি কল্পনার অনুরূপ ভাব তোমার
মনে কখনো দেখা দিয়েছে কি? দিয়ে থাকলে তার উল্লেখ করো।
উত্তরঃ কবি কল্পনার অনুরূপ ভাব আমার মনেও দেখা দিয়েছে। ঠিক সন্ধ্যের
পর গাছের চেহারাটা সত্যই যেন অশরীরী হয়ে উঠে। অন্ধকারে হাওয়া লেগে গাছের মাথা
এদিক-ওদিক যখন দোলে তখন যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা ভুতের মতোই মনে হয়। কবি
কল্পনার অনুরূপ কখনো যখন ঝড় বৃষ্টির পর গাছেরা পরিস্কার হয়ে উঠে এবং গাছের
মাথায় ভেজা পাতার উপর যখন চাঁদের আলো পড়ে তখন যেন সত্যিই মনে হয় গাছেরা বহু
মূল্যবান রত্নের মুকুট পড়েছে। কিন্তু সকাল বেলায় সেই সব রাতের দৃশ্য কিছুই থাকে
না। মাটিতে ঝড়ে পড়ে থাকা পাতায় সকালের আলো আবার অন্য রূপ ধারণ করে।
শব্দৰ্থ :
ভূতের নাচ – ভূতের অর্থ অপদেবতা, অশরীরী।
গরগর – গলার আওয়াজ।
হীরা – অতি উজ্জ্বল মূল্যবান রত্ন।
আবছায়া – অস্পষ্ট আলো, আলো-আঁধারি।
ঝিকির-মিকির – মৃদু আলোর চঞ্চল আভা।
-000-