Chapter-7 ফুল ফুটুক না ফুটুক
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের
অন্তর্গত?
উত্তরঃ কবিতাটি ‘ফুল ফুটুক’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
(খ) হরবোলা শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ হরবোলা শব্দের অর্থ যিনি অনেক রকম বুলি বলতে পারেন, এরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের পাশুপাখির ডাক নকল করে থাকেন।
(গ) অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে কে
হাসছিল?
উত্তরঃ অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে দাড়ি পাকানো গাছ হাসছিল।
(ঘ) রেলিঙে বুক চেপে ধরে কে সাত পাঁচ
ভাবিছিল?
উত্তরঃ রেলিঙে বুক চেপে ধরে কালোকুচ্ছিত আইকুড়ো মেয়ে সাত পাঁচ
ভাবছিল।
(ঙ) ঠুলি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ ‘ঠুলি’ শব্দের অর্থ হ’ল চোখের আবরণ।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) ‘লাল কালিতে ছাপা চিঠি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ রঙিন চিঠি, শুভ মঙ্গলিক বার্তারে চিঠি বোঝানো
হয়েছে। অর্থাৎ বিয়ের নিমন্ত্রণ চিঠির
কথা বোঝানো হয়েছে। এখানে কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়েটির মনেও যে বিয়ে নিয়ে
স্বপ্ন আছে তা এই চিঠির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে।
(খ) ‘গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে’ কে কী করত বলে কবিতায় উল্লিখিত
হয়েছে।
উত্তরঃ গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে হরবোলা ছেলেটি একটি দুটো পয়সা পেলে
কোকিলের সুরে ডাকতে ডাকতে যেত।
(গ) ‘পাজর ফাটিয়ে হাসছে’— কে হাসছে? সেই হাসির প্রকাশ কোমন?
উত্তরঃ এক কাঠখোট্টা গাছ হাসছে।
সেই হাসির প্রকাশ তার কচি কচি পাতায়, যেন পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে।
(ঘ) সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের দুটি
কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো?
উত্তরঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম হ’ল—‘ফুল ফুটুক না ফুটুক’ এবং ‘পদাতিক’।
(ঙ) প্রজাপতিটি কার গায়ে এসে
বসেছিল। প্রজাপতিটি পোড়ারমুখ বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ প্রজাপতিটি কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়েটির গায়ে বসেছিল।
মেয়েটির বিয়ে হচ্ছিল না তাই সে আইবুড়ো হয়ে গেছে। আর এই
কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়েটির বিয়ে না হওয়ার কারণ হ’ল অর্থনৈতিক
অচ্ছলতা। কিন্তু তবুও মেয়েটির জীবনেও বসন্ত সন্ধ্যার লাল হলুদ আকাশ প্রেমের ইশারা
দেয়। সেই সময়ই এক
প্রজাপতি উড়ে বসে তার গায়ে। তাই সে প্রজাপতিকে পোড়ারমুখ বলেছে।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) আইবুড়ো মেয়েটির যে ছটি কবিতায়
ফুটে উঠেছে, তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তরঃ বসন্ত ঋতুর রাজা। এসময় ফুলে ফুলে সেজে উঠে প্রকৃতি, মানুষের মনে সঞ্চারিত হয় প্রেম। গ্রামের সঙ্গে শহরের বসন্ত
প্রকৃতিগতভাবে আলাদা। সহস্ৰ প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবন আবার আশায় বুক বাঁধে।
পাথুরে ফুটগাথ দীর্ণ করে শাখা মেলা গাছের ডালে ফুলের হাসি প্রত্যক্ষ করেছেন কবি।
এই কবিতাটিতেও একটি কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ের কথা বলা হয়েছে। তার বিয়ের বয়স
পার হয়ে গেছে। সে কুরুপা উল্লেখ না থাকলেও তার বিয়ে না হওয়ার পিছনে অর্থনৈতিক
অসচ্ছলতাও একটি কারণ। অর্থ হারিয়ে ফেলা এই মেয়েটির জীবনেও বসন্ত সন্ধ্যার লাল
হলুদ আকাশ প্রেমের ইশারা দেয়। সে সময়ই এক প্রজাপতি উড়ে এসে বসে তার গায়ে। এবং
তার মনে সঞ্চারিত হয় নতুন আশা। কবিতাটিতে কাঠখোট্টা গাছের সঙ্গে আইবুড়ো মেয়েটির
ছবি কবির সৃষ্টিশীলতার গুণে অতুলনীয় হয়ে উঠেছে।
(খ) গাছের প্রসঙ্গটি কবিতার কোন
বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করেছে কী? তোমার অভিমত ব্যক্ত করো।
উত্তরঃ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে কোনো বদ্ধমূল সংস্কারে নিগড়ে বেঁধে
বিশ্লেষণ করা ঠিক হয় না। জীবনের কাছে আসতে গেলেই জীবনঘনিষ্ঠ যুগ সময় সম্পৃক্ত
হতে থাকেন কবিরা। ব্যক্তিগত জীবন, নিজস্ব চেতনার প্রান্তর বেঁচে থাকার
সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে থাকা সমাজ সময় এই সমস্তর আঘ্রানেই তাই রে থাকে কবিতা
শরীর। চল্লিশের দশক জুড়ে বাংলার একের পর এক মন্বন্তর সম্প্রদায়িক হানাহানি, দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, কমিউনিষ্ট পার্টির বিরুদ্ধে
নিষেধাজ্ঞা সংবেদনশীল কবি মনকে নাড়িয়ে ছিল। সুভাষের কবিতা শুধুমাত্র
শ্রেণিদ্বন্দ্বের হয়ে ওঠেনি সমগ্র মানবসভ্যতার দ্বন্দ্ব, যন্ত্রণা আনন্দ সংগ্রাম প্রতিবাদ হয়ে উঠেছিল বলেই তা প্রচারধর্মী
শ্লোগানের সীমাকে অতিক্রম করে বহুদূরে প্রসারিত হতে পেরেছিল।
এই দৃঢ় প্রত্যয় সুভাষের কবিতার মধ্যে থেকেও ঝলসে ওঠে। যা গভীর তাবে
সঙ্গে হৃদয়কে স্পর্শ করে নিশ্চিন্তভাবে। ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত কারণ শান-বাধানো ফুটপাথে যে কাঠখোট্টা গাছটি আছে সেই গাছে
ফুল ফোটার কথা নয়। কিন্তু কবি তাও বলেছেন ফুল না ফুটলেও বসন্ত বিরাজমান বসন্ত
ঋতুর কথা বলেছেন। কারণ বসন্ত হচ্ছে ঋতুর রাজা। এসময় ফুলে ফুলে সেজে উঠে প্রকৃতি, মানুষের মনে সঞ্চারিত হয় প্রেম। প্রানের সঙ্গে শহরের বসন্ত
প্রকৃতিগতভাবে আলাদা। কবিতাটি নাগরিক প্রেক্ষাপটে রচিত। আর এখানে কবি মানসিক
বসন্তের জয়গান করেছেন। গাছটির কথা আসলে এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ের প্রসঙ্গে
এনেছে। কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ের উপর পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যাখ্যানজনিত
রূঢ় বাস্তবের দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস। অথচ নির্মাণ এত মোলায়েম যে পাঠকের তেমন ভাবে
মনেই হবে না এর মধ্যে লুকিয়ে যায় জীবনের এক নির্মম ট্র্যাজিডি। কারণ আইবুড়ো
মেয়েটির মনেও প্রেম জাগে আশা জাগে প্রেমময় জীবন বাঁধার ঠিক কাঠখোট্টা গাছটির মধ্যেও
যেমন কবি ফুল ফুটতে না দেখেও কবি অনুভব করছেন বসন্ত ঋতুকে। কবি পাথুরে ফুটপাথ দীণ
করে শাখামেলা গাছের ডালে ফুলের হাসি প্রত্যক্ষ করেছেন কবি।
গাছের প্রসঙ্গটি আসলে এসেছে আই বুড়ো মেয়েটির জীবন সংকেতের মধ্যে।
(গ) কবির বসন্ত চেতনার অভিনবত্ব
নিজের ভাষায় লেখো?
উত্তরঃ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে কোনো বন্ধমূল সংস্কারের নিগনে বোধ
বিশ্লেষণ কর ঠিক হয় না। জীবনের কাছে আসতে গেলেই জীবনঘনিষ্ট যুগ সময় সম্পৃক্ত হতে
থাকে কবিরা। ব্যক্তিগত জীবন, নিজস্ব চেতনার প্রান্তরে বেঁচে
থাকার সঙ্গে নিবিড় তাবে জড়িেয়ে থাকা সমাজ সময় এই সমস্তর আঘ্রানেই তাই ভরে থাকে
কবিতার শরীর।
বসন্তু ঋতুর রাজা। এ সময় ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি, মানুষের মনে সঞ্চারিত হয় প্রেম। গ্রামের সঙ্গে
শহরের বসন্ত প্রকৃতিগতভাবে আলাদা। কবিতাটি নাগরিক প্রেক্ষাপটে রচিত। নাম থেকে
স্পষ্ট এই কবিতার মানসিক বসন্তের জয়গানে মুখর। প্রকৃতির অদৃশ্য প্রশ্রয়ে নাগরিক
মনে সঞ্চারিত হয় প্রেম। সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবন আবার আশায় বুক বাধে ।
পাথুরে ফুটপাথ দীর্ণ করে শাখামেলা গাছের
ডালেও কবি তাই ফুলের হাসি প্রত্যক্ষ করেছেন কবি। এই বিজয়ের হাসিই আসলে কবির চোখে
বসন্ত উৎসব। কাঠখোট্টা গাছটি দেখে যেমন কবির মনে যেমন বসন্ত
জেগেছে আশায় বুক বেধেছেন কবি। ঠিক তেমনি রেলিঙে দাঁড়ানো কুরুপা মেয়েটির মনেও
আশা বধে। আইবুড়ো হলেও মেয়েটির জীবনেও বসন্তসন্ধ্যার লাল হলুদ আকাশ প্রেমের ইশারা
দেয়। আর ঐ সময়ই এক প্রজাপতি এসে উড়ে বসে তার গায়ে। তার এখানেই কবির বসন্ত
চেতনার অভিনবত্ব।
(ঘ) কবিতাটির একটি পাঠ-প্রতিক্রিয়া
প্রস্তুত করো।
উত্তরঃ বসন্ত ঋতুর রাজা। এই সময় প্রকৃতি ফুলে ফলে ভরে উঠে। মানুষের
মনে এখন সঞ্চারিত হয় প্রেম। গ্রামের সঙ্গে শহরের বসন্ত প্রকৃতিগতভাবে আলাদা।
কবিতাটি নাগরিক প্রেক্ষাপটে রচিত। নাম থেকে স্পষ্ট এই কবিতা মানসিক বসন্তের
জয়গানে মুখর। প্রকৃতির অদৃশ্য প্রশ্রয় নাগরিক মনে সঞ্চারিত হয় প্রেম। সহস্র
প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবন আবার আশায় বুক বাঁধে পাথুরে ফুটপাথ দীর্ণ করে
শাখামেলা গাছের ডালে ফুলের হাসি প্রত্যক্ষ করেছেন কবি। এই বিজয়ের হাসিই কবির চোখে
বসন্ত উৎসব। রেলিঙে দাড়ানো
আইবুড়ো কুচ্ছিৎ মেয়েটি আসলে কবিতাটির
বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। মেয়েটির বিয়ের বসয় পার হয়ে গেছে। মেয়েটির বিয়ে না
হওয়ার পেঢনে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাও একটি কারন। কিন্তু তবুও মেয়েটির মনে বসন্তের
প্রেম জাগে। আশায় বুক বাঁধে মেয়েটি যখন তার গায়ে উড়ে এসে প্রজাপতি বসে। মেয়েটির জীবনে লাল
হলুদ আকাশ প্রেমের ইশারা দেয়। আর এখানেই কবিতাটির সার্থকতা ফুটে উঠেছে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। শূন্যস্থান পূর্ণ কর :
(ক) গাথরে পা ডুবিয়ে এক ……………. গাছ।
উত্তরঃ কাঠখোট্টা।
(খ) গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে /একটা
দুটে …………….. পেলে।
উত্তরঃ পয়সা।
(গ) লাল কালিতে ছাপা ………… চিঠির মত।
উত্তরঃ হলদে।
২। কবিতাটির ফুটপাথটি কেমন?
উত্তরঃ কবিতাটির ফুটপাথ শান-বাধানো।
৩। কাঠখোট্টা গাছটি কি ভাবে হাসছিল?
উত্তরঃ কচি কচি পাতার পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে।
৪। হরবেলো ছেলেটা কোন পাখির ভাক ভাকত?
উত্তরঃ হরবোলা ছেলেটা কোকিল পাখির ভাক ভাকত।
৫। আইবুড়ো মেয়েটি কোথায় দাড়িয়েছিল?
উত্তরঃ আইবুড়ো মেয়েটি রেলিঙে দাড়িয়েছিল।
৬। দরজা বন্ধের শব্দটি কেমন হয়েছিল?
উত্তরঃ দড়াম করে দরজা বন্ধের শব্দ হয়েছিল।
৭। গাছটি কোন সময় হাসছিল?
উত্তরঃ অন্ধকারে মুখ চেপে গাছটি হাসছিল।
শব্দৰ্থ :
শান বাঁধানো – বালি-পাথর-সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো।
কাঠখোট্টা – নীরস।
ঠুলি – চোখের আবরণ।
হরবোলা – যিনি অনেক রকম বুলি বলতে পারেন।
সাত-পাঁচ – নানারকম এটা-ওটা।