Chapter-8 কেউ কথা রাখেনি
প্রশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তরঃ কেউ কথা রাখেনি কবিতাটি ‘বন্দী জেগে আছে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
(খ) অসমাপ্ত গানের অন্তরাটুকু শোনার
জন্য কবি কত বছর ধরে অপেক্ষা করে আছেন বলে কবিতায় উল্লেখিত হয়েছে?
উত্তরঃ অসমাপ্ত গানের অন্তরাটুকু শোনার জন্য কবি পঁচিশ বছরে অপেক্ষা
করে আছেন বলে কবিতায় উল্লেখিত হয়েছে।
(গ) কবিতায় উল্লেখিত মাঝির নাম কী?
উত্তরঃ কবিতায় উল্লেখিত মাঝির নাম নাদের আলি।
(ঘ) রাস-উৎসবের আয়োজন হয়েছিল
কাদের বাড়িতে?
উত্তরঃ রাস-উৎসবের আয়োজন হয়েছিল চৌধুরীদের বাড়িতে।
(ঙ) কবি কৈশোরের প্রেমিকার নাম কী
ছিল?
উত্তরঃ কবির কৈশোরর প্রেমিকার নাম বোষ্টুমি।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন :
(ক) বোষ্টুমী কবিকে কোন গান
শুনিয়েছিলেন? অন্তরাটুকুকারে শুনিয়ে যাবার কথা ছিল?
উত্তরঃ ‘কেউ কথা রাখেনি ত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি এই গানটি
শুনিয়েছিলেন।বঅন্তরাটুক শুক্লা দ্বাদশীর দিন শুনিয়ে যাবার কথা ছিল।
(খ) নাদের আলী কবিকে কী দেখাতে নিয়ে
যাবেন বলেছিলেন? যেখানকার বিশেষত্ব কী?
উত্তরঃ নদের আলী কবিকে তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবেন বলেছিলেন।
সেখানকার বিশেষত্ব হল যে সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে।
(গ) চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে কবি কী
কী দেখেছিলেন?
উত্তরঃ চৌধুরীদের গেটে দাড়িয়ে কবি দেখেছেন ভিতরে রাস উৎসব হচ্ছে। বিভিন্ন রঙে
রঙিন ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কন পরা ফার্সা রমনীরা অনেক মুশি, তারা আমোদে আহলাদে হাসছেন। তারা কবির দিকে ফিরেও তাকাননি। কবি এই
দৃশ্যই দেখেছেন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে।
(ঘ) বরুণা কবিকে কী বলেছিল? সে কথা রেখেছিল কী?
উত্তরঃ বরুণা কবিকে বলেছিল যে, যেদিন কবি তাকে সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন বরুণার বুকেও সুগন্ধি আতরের গন্ধ হবে সে কথা রাখেনি।
(ঙ) চন্দ্রভূক অমাবস্যা বলতে কী বোল?
উত্তরঃ চন্দ্রভুক বলতে বোঝায় যে চাঁদকে ভক্ষণ করে। অমাবস্যায় চাঁদর
চিহ্ন থাকে না। তাই কবি ‘চন্দ্ৰভুক অমাবস্যা’ শব্দবন্ধ নির্মাণ করেছেন।
৩। দীর্ঘ উত্তরের জন্য প্রশ্নঃ
(ক) কবির জীবনের কথা না রাখার
উদাহরণগুলি উল্লেখ করা।
উত্তরঃ কবির স্মৃতিতে মুদ্রিত হয়ে আছে জীবনের কথা না রাখার অনেক
উদাহরণ। যেমন আগমনী গান অসমাপ্ত রেখে চলে যাওয়া বোষ্টুমীর কথা না রাখা, নাদের আলীর তিন প্রহরের, বিল দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা না
রাখা, লাঠি লজেন্স, রয়্যাল গুলি কিনতে না পারার আক্ষেপ
একদিন পূর্ণ হবে, বাবার দেওয়া সেই কথা না রাখা এবং কৈশোরর প্রেমিক বরুণার কথা না
রাকা।
(খ) ব্যাখ্যা করো :
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল
কেউ কথা রাখেনি
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটিতে কবির জীবনের কথা না রাখার কিছু উদাহরণ রয়েছে। কবির জীবনের
তেত্রিশ বছর কেটেছে আর এই তেত্রিশ বছরে কেউ কথা রাখেনি। ছেলেবেলার এক বোষ্টুমি
আগমনী গানের অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে বলে আর আসেনি। দীর্ঘ পঁচিশ বছর কবি অপেক্ষা
ছিলেন। কিন্তু বোষ্টমি আসেনি। এরপর নাদের আলীর তিনি প্রহরের চিল দেখাতে নিয়ে
যাওয়ার কথা ছিল সেখানেও কবি ব্যর্থ হয়েছেন, আলী কথা রাখেনি। লাঠি লজেন্স
রয়্যাল গুলি কিনতে না পারার আক্ষেপ একদিন পূর্ণ হবে, বাবার দেওয়া সেই কথা না রাখা এবং কৈশোরর প্রেমিকা বরুণার কথা না
রাখা এসমস্ত কিছুইতেই কবি ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে কবির ব্যক্তিগত না পাওয়াগুলি
ব্যক্ত হয়েছে। দীর্ঘ তেত্রিশ বছর অপেক্ষা করেছেন তবুও কেউ কথা রাখেনি কবির।
(গ) নিজের ভাষার কবিতাটির একটি
পাঠ-প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত করো।
উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাটিতে কবির জীবনের অনেক না পাওয়ার দৃষ্টান্ত
রয়েছে। অর্থাৎ কবির দীর্ঘ জীবনে চলার
পথে অনেক কবিকে কথা দিয়ে কথা রাখেনি। সেই অভিজ্ঞতাকে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
ছেলেবেলার এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে অন্তরাটুকু শুক্ল দ্বাদশীর দিন শোনাবে বলে আর সে কবির কথা
রাখেনি। আর করি বোষ্টুমির গান শোনার জন্য দীর্ঘ পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় ছিলেন। কবির মামা বাড়ির এক
মাঝি নাদের আলি কবিকে বলেছিলেন যে তিনি তিনপ্রহরের বিল দেখাবেন যেখানে পদ্মফুলের
মাথায় সাপ আর ভ্রমেরর খেলা চলে। কিন্তু কবির সেই ভ্রমরেঃ খেলা দেখা হয়নি কারণ
আলিও কথা রাখেনি। লাঠি লছেঙ্গ রয়্যাল গুলি কিনতে না পারার আক্ষেপএকদিন পূর্ণ হবে
বলে কবি অপেক্ষা করেছেন কবির বাবার দেওয়া সেই কথাও বাবা রাখেননি। কবির কৈশোরর
প্রেমিকা বরুণাও কথা রাখেনি, কবি তার জন্য দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে
লাল কপেড় বেঁধেছিলেন বিশ্বসংসার খুঁজে (১০৮) টা নীল পদ্মও খুঁজে এনেছিলেন কিন্তু
তবুও বরুণা কবির কথা রাখেনি। কবির জীবনের তেত্রিশ বছর বোটে গেছে কিন্তু কবিকে যারা
যারা কথা দিয়েছিল তা কেউ কথা রাখেনি।
কবিতাটিতে আসলে কবি ব্যক্তি থেকে সমষ্টির অভিজ্ঞতাকে ছুঁতে চেয়েছেন।
সেই সঙ্গে জীবনে এক সহজ সত্য বলে যেনে নেন তাঁর ব্যক্তিগত না পাওয়াগুলিকে। এইখনেই
কবিতাটির সৌন্দর্য সার্থক হয়েছে।
(ঘ) লস্কর বাড়ির ছেলেদের কোন আচরণ
কিশোর কবি মনে আক্ষেপের জন্ম দিয়েছিল? সেই আক্ষেপ মিটেছিল কি?
উত্তরঃ লস্কর বাড়ির ছেলেরা কবিকে দেখিয়ে দেখিয়ে রয়্যাল, লাঠি, লজেন্স চুষে খেয়েছে। অথচ কবি কখনো একটা রয়্যাল গুলি কিনতে পারেননি।
আর এটাই কবির মনে আক্ষেপে জন্ম দিয়েছিল।
কবির সেই আক্ষেপ মিটেনি। কবি কাক কবির কাঁধ দুয়ে বলেছিলেন একদিন
কবিও এই লজেন্সর স্বাদ আস্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন, কিন্তু কবির বাবা এখন অন্ধ, তাই সেই আশা আর পূর্ণ হয়নি। কবিকে আর কেউ লাঠি-লজেন্স ফিরিয়ে
দেয়নি।
(ঙ) কবি বাবর যে ছবিটি স্বল্প শব্দে
তুলে ধরেছেন, তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তরঃ কবিতাটিতে কবি তাঁর বাবার ছবিটি খুব স্বল্প শব্দে তুলি
ধরেছেন। কবির কৈশোর কাল অত দরিদ্রতার মধ্যে কোটছে যে কবি একটা রয়্যাল গুলি কিনতে
পারেননি। অথচ লম্বারবাড়ির ছেলেরা লাঠি-লজেন্স খেয়েছে কবিকে দেখিয়ে দেখিয়ে। এতে
কিশোর কবির মনে আক্ষেপের জন্ম হয়। এমনকী চৌধুরীদের গেটে যখন কবি ভিখারীর মতো
দাড়িয়ে দেখেছেন ভিতরে রাস উৎসব হচ্ছে। আর বিভিন্ন রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কন পরা ফর্মা
রমণীরা কতরকম আমোদ প্রমোদ করে হেসেছে অথচ কবির দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। তখন কবির
বাবা কবির আক্ষেপ মনকে সন্তুষ্টি দিয়েছেন যে একদিন তাদেরও দিন ফিরবে। কবিরাও
একদিন এইসব আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু কবির সেই আশাও পূর্ণ হয়নি। কারণ কবির
বাবা এখন অন্ধ তাই আর কবির সেই আনন্দ দৃশ্যগুলি আর দেখা হয়নি। কবি তখন বুঝলেন যে
রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স কবিকে কেউ ফিরিয়ে দেবে না।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। শূন্যস্থান পূর্ণ কর :
(ক) ছেলেবেলার এক বোষ্টুমি তার ……………. গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল।
উত্তরঃ ছেলেবেলার এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল।
(খ) তোমাকে আমি……………… বিন দেখাতে নিয়ে যাবো।
উত্তরঃ তিনপ্রহরের।
(গ) যেখানে………………. মাথায় সাপ তার ভ্রমর খেলা করে।
উত্তরঃ পদ্মফুলের।
(ঘ) ……………… মতো চৌধুরীদেব গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি।
উত্তরঃ ভিখারীর।
(ঙ) ………………. চোকে বেঁধেছি লাল কাপড়।
উত্তরঃ দূরন্ত ষাঁড়ের।
শব্দার্থ :
বোষ্টুমী – বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলা।
অগমনী – পার্বতীর বাপের বাড়ি আসা উপলক্ষে রচিত গান ।
ফুঁড়ে – ভেদ করে।
সুবৰ্ণ কঙ্কণ – সোনার চুড়ি।
আতর – সুগন্ধি দ্রব্য।
-000-